শুক্রবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

প্রাণহীন কোন প্রতীক নয়, আপনার নির্বাচিত নেতা হোক মনুষ্য প্রাণের অধিকারী

একজন ব্যবসায়ী খুঁজে মুনাফা, শিল্পী খুঁজে তারকা খ্যাতি , খেলোয়াড় খুঁজে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার আর মেডেল, আমলা খুঁজে পরিপাটি চেয়ার, মোটা অঙ্কের বেতন কিন্তু যে মানুষটির মুনাফার মনোবৃত্তি নেই, নেই তারকা খ্যাতির সুপ্ত বাসনা বা ম্যাচ সেরার পুরস্কারের আকাঙ্ক্ষা, অধনস্থ ঘেরা নির্দেশের নরম চেয়ারের স্বাদ যার কাছে তুচ্ছ, তিনিই রাজনৈতিক নেতা , মানুষের সমস্যা,শঙ্কট, সমাধান ও সম্ভাবনা যিনি অন্তর দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পান, তিনিই রাজনৈতিক নেতা। পরিবারকে পরিবার না ভেবে সমাজ ও রাষ্ট্রকে যিনি পরিবার ভাবেন, তিনিই রাজনৈতিক নেতা। একজন রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও মানবিক গুণাবলী অর্জনকারী মানুষ হবেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষের প্রতিনিধি বা নেতা,এটাই হচ্ছে একটি আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।সমাজের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানিত ব্যক্তি হচ্ছেন জন-প্রতিনিধি।একটি রাষ্ট্র ও সমাজের স্থিতিশীলতা নির্ভর করে রাজনৈতিক চিন্তাশীল ব্যক্তিত্ব ও জনগণের নির্বাচিত জন-প্রতিনিধিদের জনকল্যাণমুখী চিন্তা ও কর্মকাণ্ডের ভেতর।তাই সমাজের সাধারণ মানুষের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে তার নিজের ও সমাজের কল্যাণের স্বার্থে তার নেতা বা প্রতিনিধি নির্বাচন করা।তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিই রচনা করবেন তাদের আগামীর রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ।সুতরাং সমাজের সেরা মানুষটিকে প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নেয়া সমাজের সর্বস্তরের মানুষের একটি মহান দায়িত্ব। আমাদের সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন।এই নির্বাচনটির গুরুত্ব অন্যান্য নির্বাচন থেকে আলাদা কারণ এই নির্বাচনের ভেতর দিয়ে সাধারণ মানুষ তার রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণকারী প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন এবং এই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা সৃষ্টি হবে দেশের আগামীর সম্ভাবনা ও পরিচালিত হবে বাস্তবায়নের যাত্রা পথ। এবারের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিভিন্ন দলের দলীয় প্রার্থী নির্বাচনের পূর্বেই আলোচনা শুরু হয়েছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দলীয় মনোনয়ন ফর্ম সংগ্রহ করাকে কেন্দ্র করে, যা পূর্বের নির্বাচনগুলোতে এমনটা হতে দেখা যায়নি। কারণ রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টহীন নানা পেশার অরাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের রাজনীতির মাঠে প্রবেশ করে আধিক্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে।রাষ্ট্রের সব চেয়ে গুরুত্বের জায়গা হচ্ছে রাজনীতি,যা এখন যেনোতেনো একটি খেলার বিষয়ে পরিণত হয়েছে।বিগত পাঁচ বছর রাষ্ট্র পরিচালিত হয়েছে নিয়োগ ভিত্তিক জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা এক মস্তিষ্ক ভিত্তিক সংসদের মাধ্যমে। বিগত সংসদে ৩৩০ জন সাংসদের মধ্যে ৩২৯ সাংসদের মস্তিষ্ক ছিল মূলত অকার্যকর, যেহেতু নিয়োগের ভিত্তিতে সংসদের আসন লাভ করেছেন তাই নিয়োগকর্তার ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন ও সমর্থন দেয়াই ছিল তাদের মূল দায়িত্ব ও কর্তব্য।এই ধারার মধ্যদিয়ে রাজনীতি চর্চা ও রাজনীতি করার মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া দারুণ ভাবে হ্রাস পেয়েছে।তারই প্রতিফলন ফুটে উঠেছে এবারের নির্বাচনী মৌসুমে।বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের বিগত সময়ে কৃত্তিম রাজনৈতিক নেতা সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে অনুসরণ করে বিভিন্ন প্রতিনিধিত্বশীল শিল্পী, খেলোয়াড়,ব্যবসায়ী স্ব স্ব পেশায় নিষ্ক্রিয় হয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আনুগত্যের মাধ্যমে জনসেবার নামে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অর্জন ও উপভোগের জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।সাধারণত তৃণমূল থেকে রাজনীতি করা ও রাজনীতি চর্চা করা মানুষ রাষ্ট্রের কোন পদকে মহান দায়িত্ব ভেবে থাকেন অন্যদিকে কোন অরাজনৈতিক ব্যক্তি রাষ্ট্রের কোন দায়িত্বের চেয়ারকে মনে করেন ক্ষমতা উপভোগের বিষয় । ফলে অরাজনৈতিক ব্যক্তি দ্বারা রাষ্ট্রের কোন পদ দখল হলে সাধারণ মানুষের প্রতারণা হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে।গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রতিটি মানুষের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জনসেবা করার অধিকার রয়েছে, তবে একটি আদর্শ রাজনৈতিক দলের প্রধান দায়িত্ব একজন কর্মীকে রাজনৈতিক জ্ঞানের মধ্যদিয়ে সমাজ সচেতন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পর তার যোগ্যতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরের প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব মূলক নির্বাচনে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করা।কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা দিয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃশ্যপট।ভোটের খেলায় বাজীমাত করার জন্য দেশের রাজনৈতিক দলগুলো বিনোদনন জগতের জনপ্রিয় ব্যক্তিদের জনপ্রিয়তা ও নির্বাচনে টাকার ব্যবহারের কথা মাথায় রেখে ত্যাগী ও রাজনৈতিক চিন্তাশীল ব্যক্তিদের চেয়ে অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী ও শিল্পীদের গুরুত্ব দিয়ে সরাসরি জনপ্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়ন দেবার দিকে ঝুঁকছেন। একজন শিল্পী বা খেলোয়াড় বিনোদদের মাধ্যমে দেশের মানুষের মনকে উৎফুল্ল রাখতে ভূমিকা রাখেন, সেই সাথে তারা দেশের শিল্প সংস্কৃতির ধারক ও বাহক, একটি মননশীল সমাজ গঠনে তাদের গুরুত্ব অপরিসীম।শিল্প ও সংস্কৃতি একটি জাতির পরিচয় বহন করে । রাষ্ট্রের দায়িত্ব একজন শিল্পী বা খেলোয়াড়ের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দেশের শিল্প সংস্কৃতির ক্ষেত্রে প্রয়োগের মাধ্যমে বহির্বিশ্বের কাছে দেশের ইমেজ উজ্জ্বল করা। আবার একজন শিল্পী বা খেলোয়াড় রাজনীতির মাধ্যমে জনগণের পাশে থেকে সেবা করতে পারেন, তবে রাষ্ট্রের জনপ্রতিনিধিত্ব মূলক কোন গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে বসে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে চান তাহলে জনগণের স্বার্থেই তৃনমূলের রাজনীতির মাধ্যমে জনগণের আস্থা ও রাজনৈতিক যোগ্যতা প্রমাণের সিঁড়িগুলো অতিক্রম করে আসাই শ্রেয়। তানাহলে জাতীয় সংসদের মত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কোন গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশের ক্ষেত্রে বিশ্লেষণধর্মী মতামতের পরিবর্তে হাবাগোবা আলোচনা দিয়ে সময় পার করে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় করতে হবে ,নতুবা শিল্পী মমতাজের মত সংসদ নেতার প্রশংসা সঙ্গীত গেয়ে সংসদ নেতাদের বিনোদনের খোরাক যোগাতে হবে।একজন রাজনৈতিক নেতা বা জনপ্রতিনিধির উপর ন্যস্ত থাকে জনগণের সামগ্রিক স্বার্থ, ফলে তাকে মানবিক গুনের অধিকারী, অধিকার সচেতন হতে হয়, যেটি তিনি অর্জন করেন আপামর মানুষের সাথে অতি সাধারণ ভাবে মেশার মধ্যদিয়ে এবং সাংগঠনিক কাঠামোর ভেতর দিয়ে রাজনৈতিক জ্ঞান অর্জনের ভেতর দিয়ে।সুতরাং মানুষের বিনোদনের খোরাক যুগিয়ে তারকা খ্যাতি অর্জন করা আসমানী মানুসিকতা দিয়ে জনসেবা করা আর মানুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাশে থেকে তাদের সমস্যা শঙ্কট চিহ্নিত করে সমাধানের জন্য সেবার মানুসিকতার ভেতর দিয়ে নেতা হয়ে জনসেবা করার মধ্যে বিস্তর ফারাক পরিলক্ষিত। ব্যবসায়ী শ্রেণী হচ্ছে একটি দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ।এদের কর্মকাণ্ডের উপর দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রেও এদের ভূমিকা অপরিসীম।কিন্তু পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় একজন ব্যবসায়ীর চরিত্রে ফুটে উঠে অধিক মুনাফার মনোবৃত্তি।এদের ধ্যান ধারণায় থাকে কোথাও অর্থ লগ্নি করলে সেখান থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ মুনাফা অর্জন করার প্রবণতা।এই মনোবৃত্তি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলে এর প্রয়োগ অন্যান্য ক্ষেত্রে ভয়ংকর।আমাদের দেশে বর্তমানে রাজনীতি ও রাষ্ট্র ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ অধিকাংশই ব্যবসায়ীদের হাতে।এদের অনেকেই ক্ষমতা কেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলগুলোতে ব্যক্তি স্বার্থে অর্থ লগ্নির মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেছে,আবার রাজনৈতিক দলগুলোও অনেককে নিজস্ব স্বার্থে সরাসরি পদের মাধ্যমে রাজনীতিতে সংস্থান করেছে।রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাংক ঋণ আত্মসাৎ, শেয়ার বাজার থেকে সাধারণ মানুষের অর্থ লুটে খাওয়ার দৃশ্য আমরা চাক্ষুষ দেখেছি।একজন প্রকৃত রাজনৈতিকে নিজস্ব অর্থ সম্পদ,মেধা ও জ্ঞান জনগণের স্বার্থে ব্যয় করার মানসিকতা সম্পন্ন হয়ে থাকে, ফলে তার হাতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব অর্পণ হলে রাষ্ট্রের সম্পদ সুরক্ষিত থাকে এবং তিনি জনগণের রক্ষক হিসেবে হিসেবে কাজ করে থাকেন।কিন্তু সরাসরি ব্যবসা থেকে রাজনীতিতে প্রবেশ করা রাজনৈতিকের থাকে মুনাফার মনোবৃত্তি ফলে এমন ব্যক্তি যখন দলের দলীয় মনোনয়নের মাধ্যমে নির্বাচনের জয়ী হয়ে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কোন আসন অলংকৃত করে জনগণের প্রতিনিধিত্ব অর্জন করে তখন তার মধ্যে নির্বাচনে খরচ হওয়া পোস্টারের টাকা থেকে শুরু করে ব্যয় হওয়া প্রত্যেকটি টাকা তার দায়িত্বের চেয়ার থেকে দ্রুত তুলে আনার তাড়নায় অস্থির হয়ে উঠেন।তার দায়িত্বের চেয়ার তার কাছে জনগণের আমানত মনে না হয়ে ব্যবসারই একটা অংশ মনে হয়।ফলে রাজনীতিতে ব্যয় হওয়া অর্থ তিনি দায়িত্বের চেয়ার থেকে অধিক মুনাফাসহ তুলে আনার জন্য সচেষ্ট থাকেন এবং প্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জনগণের স্বার্থে ব্যবহারের পরিবর্তে ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থে ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।ফলশ্রুতিতে সাধারণ মানুষ এমন নেতার দ্বারা প্রতারিত হয়ে থাকে।যা আমাদের দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দৃশ্যমান। একজন মাশরাফি তার ক্রীড়া নৈপুণ্য ও অর্জিত অভিজ্ঞতা খেলার মাঠে প্রয়োগ করে জয়ের মাধ্যমে একটি জাতীকে হাসাতে পারেন, ঠিক তেমনি একজন প্রকৃত রাজনৈতিক গুণাবলী সম্পন্ন প্রাজ্ঞ রাজনৈতিক তার রাজনৈতিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা প্রয়োগের মাধ্যমে একটি জাতীর রূপরেখা পরিবর্তন করে দিতে পারেন।সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আমাদের সামনে পরিক্ষিত মাদক ব্যবসায়ী, ঋণ খেলাপি, দুর্নীতিবাজ, কালোবাজারি, সন্ত্রাসী, আবার ভোটের জন্য ধর্না দিচ্ছে।ওদের হাতে কালো টাকার বাণ্ডিল রয়েছে। সামান্য একটু সুবিধা পাওয়ার আশায় মাতৃভূমিকে এমন নিকৃষ্ট মানুষদের হাতে তুলে দিয়ে পরবর্তীতে আত্মগ্লানিতে ভোগার চেয়ে আগেই সচেতন হওয়া একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব।প্রাণহীন কোন প্রতীককে আপনার নেতা বানাবেন না ,আপনার নির্বাচিত নেতা হোক মনুষ্য প্রাণের অধিকারী।

শনিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৮

বাংলাদেশের চলমান রাজনীতির কালো অধ্যায় এবং আগামীর বাংলাদেশ

ছাত্রজীবনে ইসলামি ছাত্র শিবির করা যে ছেলেটি  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে নামের আগে বঙ্গবন্ধু বলতে ইতস্ত বোধ করতেন, সেই ছেলেটি এখন বঙ্গবন্ধুর জন্ম কিংবা মৃত্যু বার্ষিকীতে তার নামের আগে  হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্বোধন করে ফেচবুক স্ট্যাটাস দেয়। যে ব্যক্তিকে  জামাত ইসলামের আন্দোলন সংগ্রাম ও মিছিল মিটিংয়ের অগ্রভাগে দেখা যেতো  সে এখন স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আওয়ামেলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় এবং আঞ্চলিক কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হওয়ার সুবাদে সভা মঞ্চের দলীয় সম্মানের চেয়ার অলংকৃত করে  মঞ্চের শোভা বর্ধন করেন। যে আমলা যৌবনের  প্রথম প্রেমে পরা রাজনীতির ভালোবাসার চিহ্ন হিসেবে সুন্নতি দাঁড়িটুকু ধরে রেখেছিল, রাজাকার সম্বোধন ও চাকুরী বাঁচাবার তাগিদে সুন্নতি  দাড়িকে ফ্রেঞ্চ কাট স্টাইলে রূপান্তর এবং  কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করে আপামর মানুষের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা ভক্তি করার ব্যবস্থা করে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির কাতারের মানুষের স্বীকৃতি লাভ করেছে। যে সন্তানের পিতা জামাতে ইসলামীর প্রভাবশালী সংসদ সদস্য ছিলেন সেই সন্তান এখন আওয়ামেলীগের  মনোনয়ন প্রত্যাশী। যে সাংবাদিক দেশ প্রধানের সাংবাদিক সম্মেলনে  এক সময় নানামুখী  কর্মকাণ্ডের জবাবদিহিতা  মূলক প্রশ্ন করতে সোজা হয়ে দাড়িয়ে নির্ভয়ে সত্য উদঘাটনে ভূমিকা রাখতো, আজ সে এমন সম্মেলনে ক্ষমতাসীন দলের  স্তবগান গেয়ে দেশ প্রধানের প্রতি  শ্রদ্ধায় নতশিরে বসে পড়ে ।  

উপরে যে মানুষগুলোর  ভালোবাসার  বিবরণ দিলাম এই ভালোবাসা হল বাঁচার জন্য, এই ভালোবাসা হল ভয়ের, এই ভালোবাসা হৃদয়ের গভীর থেকে উদ্ভব  শ্রদ্ধার কোন ভালোবাসার প্রদর্শন নয়।ঠিক এমনি  ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সাগরে নৌকা ভাসিয়ে  আজ আমাদের সরকার জনগণের উন্নয়ন সাধন চালিয়ে যাচ্ছে । 

যে দল ও দলের  নেতার নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই দলের প্রতি দল মত নির্বিশেষে কৃতজ্ঞতা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধাতো অন্তরের গভীর থেকে উদ্ভব হওয়ার কথা,  ভীতির থেকে নয় । যে নতুন প্রজন্ম বিভ্রান্ত, তাদেরকে সত্য তুলে ধরে, যুক্তি উপস্থাপন করে , ভালোবাসা দিয়ে প্রকৃত সত্যের দিকে  ধাবিত করাটা ছিল মূল  দায়িত্ব।প্রকৃত সত্য এই যে, ভীতির শ্রদ্ধা, প্রশংসা এবং চাটুকারদের বিজ্ঞাপনী ভালোবাসার চাঁদর মুড়ি দিয়ে চারপাশ  না দেখে  দম্ভের সহিত সময় পার করছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী দলটি ।স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে  যারা এই দলটির নেতৃত্বে এসেছে  তাদের কাছে স্বাধীনতার চেতনা হল, রাস্তার  ফকির যেমন শরীরের দীর্ঘ দিনের পুষে রাখা  ঘা প্রদর্শনের মাধ্যমে  মানুষের করুণা অর্জন করে জীবিকা নির্বাহ করা, তেমনি আজ এই দলটির প্রতিটি স্তরের নেতা কর্মীদের স্বাধীনতার চেতনা হল ঐ রাস্তার ঘা ওয়ালা ফকিরের মতো। এই চেতনার ধোঁয়া তুলে রুটি রুজির মেয়াদকে আরও দীর্ঘ করার জন্য আপামর  মানুষের ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিনিয়ত  হরণ করে চলছে ।বাংলাদেশে অর্থ সম্পদ লুটের রাজনীতির ধারা সুদীর্ঘ কিন্তু এই লুটের ধারাবাহিকতার সঙ্গে আজকের এই সরকার বিরোধী মতাদর্শের মানুষের গলা ছেপে ধরে  লুট করেছ কণ্ঠস্বর। অর্থাৎ চোখ দিয়ে দেখা যাবে কিন্তু গলা দিয়ে শব্দ বের করা যাবেনা ।

কোন শাসক গোষ্ঠী যখন কোন জাতির উপর দানবের স্বরূপে চেপে বসে তখন তাদের স্বপক্ষে দুই ধরনের সমর্থক শ্রেণী উদ্ভভ হয়: 
১। শাসক গোষ্ঠী কর্তৃক সব চেয়ে  দমন পীড়নে আক্রান্ত পক্ষ বাঁচার তাগিদে রঙ পরিবর্তন করে শাসক গোষ্ঠীর সাথে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করে। 
২।সুবিধাবাদী শ্রেণী ব্যক্তিগত লোভ লালশাকে চরিতার্থ করার জন্য ডামাডোল পিটিয়ে অগ্রভাগে গলাবাজী করতে থাকে । 
ফলশ্রুতিতে  শাসক গোষ্ঠীর নীতি নৈতিকতা ও বিবেক সম্পন্ন কর্মীরা দলের মধ্যে উপরের দুই শ্রেণীর আধিক্য ও দলের স্বৈরাচারী আচরণের কারণে নীরব ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় । 
অর্থাৎ এক শ্রেণী ভয়ে আর এক শ্রেণী লোভে সরব হয়ে শাসকগোষ্ঠী  গুণকীর্তন  করে । 
জীবনের প্রথম প্রেম যেমন হৃদয়ের এক কোনে সারা জীবন জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকে তেমনে যে চিন্তা বা আদর্শের সঙ্গে মানুষের জীবনে প্রথম পরিচয় ঘটে সেই আদর্শ বা দর্শনের প্রতি ভালোবাসার ক্ষেত্রেও  তার ব্যতিক্রম ঘটেনা । তাই আমার দেখা যে ব্যক্তিদের ছাত্র জীবনে ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকতে দেখেছি, তাদের মধ্যে যারা আজ আওয়ামীলীগের মিছিলে অগ্রভাগে শ্লোগান দেয়,দুই একজন যারা পৃথিবী থেকে গত হয়েছেন,শেষ বিদায়ে সতীর্থদের স্মৃতিচারণে প্রথম জীবনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্মৃতিচারণ  যতটা মধুর হয়ে উঠতে দেখেছি ,কিন্তু সদ্য অতীত হওয়া  স্বাধীনতার পক্ষের রাজনৈতিক দলের পক্ষে যেসব কর্মকাণ্ডে তার অংশগ্রহণ ছিল তা ততটা আলোচনা হতে দেখিনি। 

 পৃথিবীর ইতিহাসে  কোন অন্যায়, জুলুম স্থায়ী নয়। কোন এক সময় গণমানুষের প্রতিরোধে কিংবা প্রাকৃতিক ভাবে এর অবসান ঘটে। জুলুমের  উপর যখন কোন শাসক গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দল দাড়িয়ে থাকে এবং যখন তাদের জুলুমের শাসনের পতন ঘটে তখন এদের অস্তিত্ব ধীরে ধীরে বিলীন হতে থাকে।কারণ পতনের পর  প্রথমত জীবনের ভয়ে যে মানুষগুলো শোষক দলের মধ্যে মিশে গিয়েছিলো, এই সুযোগে  তারা  তাদের ফেলে আসা  মায়ার টানে পুরনো গন্তব্যের দিকে ধাবিত হয়ে আবার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। যে মানুষগুলো স্বার্থের টানে শোষণের ঘাটে তরী ভিড়িয়েছিল তারা আবার নতুন মধুর সন্ধানে এই স্বার্থের  ঘাট ছেড়ে নৌকায় পাল তুলে দেয় । যে মানুষগুলো ভালোবেসে হোক আর কোন আদর্শিক বিশ্বাসের জায়গা থেকে হোক শোষক দলের  গুণগান করতো, দীর্ঘ দিনের অবহেলা ও অবমূল্যায়নের অভিমানে পরবর্তীতে দলের মধ্যে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় । এভাবেই দীর্ঘ দিনের শোষণের সুদীর্ঘ প্রাচীরের ক্ষয়িষ্ণু সাধন হয়ে ইতিহাসের পাতায় অবস্থান নেয়। বর্তমান আমাদের ঐতিহ্যের এই দলটি সেই পথেই হেঁটে চলছে । কিন্তু কেন এই মরণঘাতী পথের দিকে তাদের যাত্রা ? 

প্রথমত দলটি এখন একটি পারিবারিক রাজনৈতিক দল। ফলে এখান থেকে কোন রাজনৈতিক নেতা তৈরি হওয়ার কোন সুযোগ নেই । যাদেরকে নেতা বলা হয় তারা মূলত এই রাজ পরিবারের আজ্ঞাবহ রাজকর্মচারী । এদের জীবন জীবিকা, ভোগ বিলাস, ক্ষমতা নির্ভর করে এই  রাজপরিবারের প্রশংসা এবং জনগণের মধ্যে তাদের  শ্রেষ্ঠত্ব  সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছে দেয়ার প্রচার অভিযানের মধ্যে দিয়ে।

দ্বিতীয়ত  দেশে যে গণতন্ত্রের সাইনবোর্ডে নবাবতন্ত্র পাকাপোক্ত হয়েছে তা  আমরা সুবিধাভোগী চতুর জ্ঞানী ব্যক্তিরা ব্যতীত একজন সৎ নিরক্ষর ব্যক্তিরও জানা। দক্ষ সুদীর্ঘ নবাবী শাসনের ফলে  চারিদিকে শুধু জী হুজুর আর জী হুজুর ধ্বনিতে প্রকম্পিত দেশ ।নবাব  হুজুর খুশী হয়েছেনতো  মন্ত্রী,এম পি, পদসহ টাকা পয়সা ধনদৌলতের  সবই পূরণ হয়েছে অনুসারীদের । দীর্ঘ নয় বছর নবাব হুজুর উদার হস্তে অনুসারীদের দিয়েছেন, তাদের অর্জিত ধন দৌলত ও মান ইজ্জত এবার পাকাপোক্ত  ভাবে ধরে রাখার পালা। যদি এই নবাবী শাসন সুদীর্ঘ সময়ের বঞ্চিত নবাব পরিবারের হাতে চলে যায় তাহলে অর্জিত ধন সম্পদ ও জানমাল বঞ্চিত নবাব পরিবারের ক্ষুধার্ত কর্মচারীদের চরম আক্রোশের স্বীকার হয়ে বেদখল হওয়ার সম্ভাবনা নিশ্চিত। 

তৃতীয়ত ভোটবিহীন ও  জনসমর্থনহীন  ক্ষমতা ধরে রাখতে বিরোধী মতাদর্শের মানুষের উপর যে পরিমাণ গুম খুন ও নির্যাতনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা হয়েছে ভবিষ্যতে একই পরিস্থিতি তাদের নিজেদের ক্ষেত্রে ঘটলে সেই বাস্তবতা  অনুধাবন করে ভীত হয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার তাগিদে  বর্তমান ক্ষমতাসীন দলটির  স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার পথ রুদ্ধ করে কূট কৌশলের পথ বেছে নিতে এক ধরনের বাধ্য বাধকতার পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

শুধু ক্ষমতা রক্ষার কৌশলে দলটি দলীয় নীতি আদর্শ থেকে চ্যুত হয়ে বর্তমানে এক সাংঘর্ষিক অবস্থায় অবস্থান করছে।দুর্যোগময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে  বাম, ডান,  ইসলামী, মৌলবাদী, বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী মতাদর্শের দল ও ব্যক্তিদের সমন্বয় করে স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ইতোমধ্যে ঐতিহ্যগত সুনাম এখন প্রশ্নবিদ্ধ।কখনো প্রয়োজনে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকে লুফে নিয়েছে আবার এই মঞ্চের কোন আন্দোলন হুমকি মনে করে দমন করেছে।হেফাজত ইসলামকে রাতের অন্ধকারে পিটিয়েছে আবার প্রয়োজনের খাতিরে এই সংঘটনের সাথে দোস্তি করেছে। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ও মৌলবাদী সংগঠন বলে জামায়াতে ইসলামের উপর বুলডোজার চালিয়েছে আবার এই একই দলের কর্মীদের দিয়ে নিজ দল ভারী করার জন্য সংস্থানের পথও খুলে রেখেছে।সভা মঞ্চে মৌলবাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রগতির কথা বললেও ভারতের ক্ষমতাসীন কট্টর হিন্দুত্ববাদী মৌলবাদী রাজনৈতিক দল বিজেপি’র  নেতা প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মদির পদচরণে প্রণাম অব্যাহত রেখেছে শুধুই  ক্ষমতার স্বাদকে দীর্ঘ করতে।যে বাম তাদের পাশে থেকে স্বৈরশাসনের সহযোগিতা করছে তাদের চুমু দিচ্ছে আবার একই মতাদর্শের যে বাম চিন্তাধারার দল বা সংগঠন রাষ্ট্র বিরোধী চুক্তি বা জনগণের ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথে প্রতিবাদ করছে তাদের পুলিশী ডাণ্ডা দিয়ে ঠাণ্ডা করছে।ফলশ্রুতিতে নীতি নৈতিকতা ও আদর্শের যে ভিত্তির উপর দাড়িয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে জনসমর্থনের মাধ্যমে পুনরায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হবে সেই  আস্থা বা বিশ্বাস অর্জন করতে সম্পূর্ণই ব্যর্থতায় পর্যবসিত অবস্থায় রয়েছে।

 দেশে স্বেচ্ছাচারী কোন শক্তির উদয় ঘটলে এবং তা হটাতে হলে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকেই আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরি করতে প্রথমে এগিয়ে আসতে হয়। আন্দোলনকে বেগবান ও সফলতার দিকে ধাবিত করতে হলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান কাজ হল যাদের মুক্তির জন্য এই প্রতিরোধ আন্দোলন সেই সব সাধারণ মানুষদেরকে আন্দোলনে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা এবং সংযোজন ঘটানো।

সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান দায়িত্ব হল স্বেচ্ছাচারী শক্তি কর্তৃক রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থ পরিপন্থী কার্যকলাপগুলো যুক্তি ও প্রমাণ সহকারে বিশ্লেষণের মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরা।এছাড়া সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে জনগণের সৃষ্ট আশা আকাঙ্ক্ষা এবং উদ্ভূত চলমান  সমস্যা ও শঙ্কট চিহ্নিত করে তা সমাধানকল্পে সাধারণ মানুষের সুরে সুর মিলিয়ে সরকারকে চাপ সৃষ্টি করা। 

 দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি দীর্ঘ সময়কাল  রাজপথে এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রতিরোধের মুখে দলটির কোমর ভেঙ্গে এখন উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।দেশের ক্রান্তিকালে দেশের বৃহত্তর  দলটির কেন এই অবস্থা?  

চলমান আওয়ামেলীগ শাসন আমলে জনগণ যেভাবে শোষণ, নিপীড়ন ও অধিকার হরণ হয়েছে তা নিম্নরূপ : 
১ পেশী শক্তির মাধ্যমে  মানুষের ভোটাধিকার ও মুক্ত মত প্রকাশের অধিকার হরণ । 
২ বিরোধী ও ভিন্ন মতাদর্শের মানুষের গুম, খুন, জেল, জরিমানা, প্রশাসনিক হয়রানী এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ।  
২ ব্যাংকিং খাতের হাজার হাজার কোটি টাকার লুটপাট। 
৩ রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যবহার  শেয়ার বাজার  লুটপাট। 
৪  ধারাবাহিক ভাবে  প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে জ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষার পরিবর্তে সার্টিফিকেট ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার  প্রবর্তন। 
৫ প্রশাসনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দলীয়করণ। 
৬ সরকারী চাকুরীর নিয়োগে বাণিজ্যিকরণ। 
৭ উন্নয়নের নামে প্রকল্প বরাদ্দ করে রাষ্ট্রীয় অর্থ দলীয় নেতা কর্মীদের মাঝে বণ্টন ও দুর্নীতির আয়ের  মাধ্যমে বিশ্বের ব্যক্তিগত ধনি হওয়ার সূচকে দেশকে শীর্ষ অবস্থনে পৌঁছে দেওয়া ।  
৮ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মতামতকে উপেক্ষা করে সুন্দরবন ধ্বংসকারী রামপাল চুক্তি।    
৯ হাজার হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সৃষ্টির মাধ্যমে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা। 
১০ সরকারী প্রশাসনের সমর্থন লাভের জন্য সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর গড় আয় বিবেচনা না করে সরকারী চাকুরীজীবীদের অস্বাভাবিক বেতন বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাজে আয় বৈষম্য সৃষ্টি। 
১১ ডিজিটাল নিরাপক্তা আইনের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ। 
১২ ক্ষমতা রক্ষার্থে  দেশের আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ । 

বি এন পি তার সহযোগী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে করে রাজপথে মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা এবং একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের  লক্ষ্যে বিভিন্ন পন্থায় সুদীর্ঘ সময় ব্যাপী  আন্দোলন করে আসছে।বর্তমান সংযোজন খালেদা জিয়া এবং দলের সকল নেতা কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি।ক্ষমতাসীন দল এই সব  আন্দোলনের কোন তোয়াক্কা না করে  তাদের কঠোর অবস্থানে এখন পর্যন্ত অটুট রয়েছেন। 
বি এন পি’র এই ব্যর্থ আন্দোলনের সংগ্রামের প্রধান কারণ তাদের আন্দোলনের সাথে সাধারণ মানুষের রাজপথে অংশগ্রহণ না থাকা। উপরের উল্লেখিত রাষ্ট্রীয় সমস্যাগুলো নিয়ে দেশের মানুষ সুদীর্ঘ সময়কাল ধুকছে এবং মুক্তির পথ খুঁজছে।সাধারণ মানুষের ভেতরে প্রতিবাদ কিন্তু প্রকাশের দ্বার রুদ্ধ।সেই রুদ্ধ দ্বার ভেঙে মানুষ  উল্লেখিত সমস্যা নিয়ে  রাজপথে দাঁড়িয়ে অধিকার আদায় করতে চায় কোন বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে।বিএনপি উল্লেখিত সমস্যা নিয়ে কথা বলেছে টিভি টক শোতে বক্তৃতার মঞ্চে শুধুই সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে নিজের ভোটের ইমেজ বৃদ্ধির লক্ষ্যে।কিন্তু  বিএনপি কখনো  রাজপথে রাষ্ট্রের চুরি হওয়া হাজার হাজার কোটি টাকা পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলনের ডাক দিয়ে সাধারণ মানুষকে উজ্জীবিত করে আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য  আহবান জানাননি এবং কখন  প্রতিশ্রুতি দেননি যে  আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জনগণের অর্থ চুরি করবোনা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেননি।  সার্টিফিকেট ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেননি। একের পর এক ভিন্ন মতাদর্শের মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেননি। সরকারী চাকুরীর নিয়োগে বাণিজ্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিয়ে জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেনি  আমরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে অর্থের বিনিময়ে চাকুরীতে নিয়োগ বন্ধ করবো।ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে শেয়ার বাজারের লুটেরাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেননি। সুন্দরবন ধ্বংসকারী রামপাল চুক্তি সম্পর্কিত তাদের প্রকৃত অবস্থান জনগণের নিকট প্রকাশ করেনি।কিন্তু একটি দেশের প্রধান বিরোধী দলের রাজনৈতিক দায়িত্বই হল জনগণের সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানকল্পে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে  ক্ষমতাসীন দলকে চাপ সৃষ্টি করা। ক্ষমতাসীন দল যদি বিরোধী দলের যৌক্তিক দাবি উপেক্ষা করে স্বৈরাচারী আচরণ অব্যাহত রাখে তাহলে জনগণ নিজ ও রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষার্থে জনগণের যৌক্তিক দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামরত রাজনৈতিক দলকে শক্তিশালী করতে সমর্থন প্রদান করবেন এবং প্রয়োজনে রাজপথ দখল করবেন।কিন্তু বি এন  পি’র মত দীর্ঘ সময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা একটি রাজনৈতিক দল  জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কেন একটি বারের জন্য রাজপথে নেমে আন্দোলনের ডাক দিলেন না।নাকি রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব…!  

উত্তরঃ উল্লেখিত সমস্যা নিয়ে রাজপথে আন্দোলনের ডাক দেবার জন্য যে নৈতিক সাহস দরকার, বি এন পি’র সেই সাহস নেই।কারণ তাদের শাসন আমলে দেশের মানুষ একই সমস্যা নিয়ে সময় অতিবাহিত করেছে এবং পূর্বের  রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ বিভিন্ন মামলায় তাদের শীর্ষ পর্যায়ের নেত্রীবৃন্দ আইন আদালত ও জেল জরিমানায় বর্তমানে জর্জরিত। 
সরকার হটানোর হরতাল অবরোধ কার্যক্রমে যারা দলটির অর্থের যোগান দিচ্ছেন, তারা আশায় বুক বেঁধে আছেন দল ক্ষমতায় গেলে এই বিনিয়োগকৃত অর্থ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আত্নসাতের মাধ্যমে উসুল করবেন। 
অনেক নেতা তদবির করে, টেণ্ডারবাজী করে অর্থবিত্ত বানানোর মনোবৃত্তি নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন। 
বি এন পি যদি আনুষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতি মাধ্যমে ঘোষণা দেয় আমরা পুনরায় রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হাতে পেলে উল্লেখিত ধারাবাহিক অনৈতিক রাজনীতির  ধারা পরিহার করে যাবতীয় রাষ্ট্রীয় অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণার মাধ্যমে একটি মানবিক নীতি নৈতিকতা সম্পন্ন এবং বিজ্ঞান ভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করবো।এমন প্রতিশ্রুতি দিলে দেখা যাবে যেসব কালো টাকার মালিকদের টাকার  উপর ভিত্তি করে প্রতিহিংসার রাজনীতির ময়দানে আন্দোলনের নামে ধ্বংসলীলা চলে তাদের বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যাবে।লক্ষ লক্ষ শকুন মনোবৃত্তির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে, যারা অপেক্ষায় আছে বর্তমানদের তাড়িয়ে দিয়ে একই পথে ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থের।এই শ্রেণীর নেতা কর্মীরাই মূলত দলটির প্রাণ।  

ধারাবাহিক এবং ঐতিহ্যগত রাজনৈতিক ধারার কারণে দলটি হয়তো এমন মহৎ প্রতিশ্রুতি জনগণকে দেবেন না। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের ধারায় জনগণও শুধু একটা ভোট দেবার জন্য নিজ শ্রমে ঘামে পরিচালিত জীবন এবং চিন্তা কোন লুটে খাওয়া শক্তির পেছনে ব্যয় করবেন না।মানুষ তার জীবন ও সময় ব্যয় করার জন্য প্রস্তুত জাতির সামগ্রীক স্বার্থ রক্ষার জন্য।  এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হল সাম্প্রতিক সময় ঘটে যাওয়া কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন এবং সশরীরে অংশগ্রহণ।সাধারণ মানুষের সমস্যা চিহ্নিত করে যেখানে বিরোধী রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের ডাক দেবার কথা কিন্তু এই দুটি আন্দোলনে দেখা গেছে তার উল্টো চিত্র।সাধারণ মানুষ অধিকার রক্ষার জন্য রাজপথ দখল নিয়েছে আর ক্ষমতা দখলের আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলগুলো মুক্তিকামী মানুষের আন্দোলনের পিছু নিয়ে ক্ষমতা দখলের কৌশল আঁটার চেষ্টা করেছে ।    

বাংলাদেশের মানুষের কাছে নির্বাচনে জয় লাভ হল  আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল ফুটবল দলের মধ্যকার খেলায় সমর্থন দিয়ে জয়ের আনন্দ লাভের মতো। খেলায় জয় লাভকারী দলের সদস্যবৃন্দ বিভিন্ন অর্থ পুরষ্কার প্রাপ্তির মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হলেও দলবেঁধে  হৈহুল্লোর করে  উৎসাহ দেয়া সমর্থকদের শুধুই জয়ের আনন্দের মানসিক তৃপ্তি নিয়ে ঘুমিয়ে থাকতে হয়।তেমনি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে  নির্বাচনী ক্ষমতার পরিবর্তন জনগণের কাছে একটি শ্বাসরুদ্ধকর খেলার ম্যাচের  আনন্দ ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ  এই নির্বাচনী খেলায় যে দল রাষ্ট্রীয় গদি জয় লাভ করেন তাদের ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তন হয়ে লাল হয়ে যাবে কিন্তু ভোটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সমর্থন দেয়া রাজনৈতিক দলের জয়ের আনন্দের ঢেকুর তুলেই সন্তুষ্ট থাকবে হবে।এই ভোট ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে  ভাগ্যের চাকা কখনো ঘুরবে না।বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ রাজনৈতিক ভাবে অসচেতন।তারা জানেনা রাষ্ট্রের কাছে তার প্রাপ্য মৌলিক অধিকার ও রাষ্ট্রের প্রতি তার  দায়িত্ব। তবে দীর্ঘ দিনের শোসন,বঞ্চনা ও প্রতারণার ভেতর দিয়ে আজ এতটুকু  উপলব্ধি অন্তত উদয় হয়েছে।মানুষের এই উপলব্ধির  প্রমাণ মিলেছে গত কয়েক বছরে অরাজনৈতিক বিভিন্ন সংগঠনের দাবি দাওয়া নিয়ে রাজপথ দখল করা  অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের  মাধ্যমে।সঙ্গত কারণেই  বিএনপি’র শুধু  মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা  এবং একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আন্দোলন সম্পূর্ণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।

একটি অসভ্য শক্তিকে উৎখাত করতে দরকার জনসমর্থন এবং জনরোষ।বর্তমান ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারী শক্তিকে হটাতে সারা দেশে যদি সমস্ত বিরোধী দল মানব বন্ধন ও মৌন মিছিলের মাধ্যমে প্রতিবাদ করে, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর মাধ্যমে অবরোধ পালন করে। এমন প্রতিবাদে একটি জনসমর্থনহীন অবৈধ শক্তির চেতনায় কোন আঘাত করবেনা। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করেই নিশ্চিত হয়েছে যে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হয়তো আর কখনোই কোন রাজনৈতিক দলের আহবানের  কোন আন্দোলন গনরোষের রূপ নেবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে কোন জনরোষ সৃষ্টি করা  বিএনপি’র পক্ষে কখনই সম্ভব নয়।সেই পর্যবেক্ষণের জায়গা থেকেই পরবর্তী নির্বাচনে পূর্বের ন্যায় এম পি, মন্ত্রী নিয়োগের মাধ্যমে আর একটি অপশাসন কায়েমের চেষ্টায় সদা তৎপর থাকবে।  

দেশের দুই অশুভ শক্তির শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার অপরাজনীতির মাঠে চলমান খেলার  সম্ভাব্য ফলাফলের যে চিত্র ভেসে উঠছে তাহলো বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামেলীগ যদি কূট-কৌশলে রাষ্ট্র ক্ষমতা আবার খামচে ধরে সেক্ষেত্রে আগামীর বছরগুলোতে  জনগণের নিকট তাদের আবির্ভাব হবে আরও অপ্রতিরোধ্য দানবীয় চরিত্রে।আওয়ামেলীগের রাজনৈতিক আক্রোশ এবং দীর্ঘকাল ক্ষমতাহীন ও অলাভজনক রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়ে কর্মী ও নেতা শূন্যতার ফলে বি এন পি  নিষ্ক্রিয়তার দিকে ধাবিত হবে। অন্যদিকে আওয়ামেলীগের ধারাবাহিক শোষণ,শাসন এবং উৎপীড়নের ফলে  জনগণের নিকট তাদের গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের অংকে পৌঁছুবে। ফলশ্রুতিতে কোন অরাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামের সূত্র ধরে সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বিস্ফোরণের মাধ্যমে ইতিহাসের পাতায় অবস্থান নেবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে আগামী নির্বাচনে যদি  আওয়ামেলীগের  কূটকৌশল ব্যর্থ হয়ে বিএনপি ও তার সহযোগী শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে সে ক্ষেত্রেও ক্ষমতাসীন দলের জন্য অন্ধকার ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। ফলাফল একে অপরের হাতে একে অপরের পতনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির একটি কালো অধ্যায়ের অবসান ঘটবে। একটি ধ্বংস লীলার ভেতর দিয়েই আগামীর নতুন নেতৃত্বের নতুন একটি মানবিক ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশে মানুষের সামনে অপেক্ষমান। 

 নিকোস কালো রাতের অন্ধকার শেষে পূর্ব দিগন্তে ঊষার আলো ছড়াবেই  ……। 
ছবি ইন্টারনেট থেকে নেয়া ......... 

শনিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৮

কোটা সংস্কার আন্দোলন, বাস্তবায়ন এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

রাষ্ট্রকে একটি ট্রেনের সঙ্গে তুলনা করলে, সেই ট্রেনের চালক হচ্ছে রাজনীতিবিদরা, যন্ত্রাংশ ও ইঞ্জিন হচ্ছে দেশের আমলারা এবং সমস্ত বগীতে বসা যাত্রীরা হচ্ছেন দেশের জনগণ।বগীতে বসা যাত্রীদের ঝুঁকিমুক্ত নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিতে হলে প্রয়োজন দক্ষ ও কর্তব্যপরায়ণ চালক এবং উন্নত যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি ইঞ্জিন। এর বিপরীত হলে বগিতে বসে থাকা  শতশত যাত্রীর জীবন হবে নিশ্চিত ঝুঁকির সম্মুখীন ।আমাদের রাষ্ট্র নামক রেলগাড়ির চালকগন কেমন দক্ষ ও কর্তব্যপরায়ণ তা আমরা সুবিধাভোগী চতুর জ্ঞানী ব্যক্তিরা ব্যতীত একজন সৎ নিরপেক্ষ  নিরক্ষর ব্যক্তিরও জানা।এমন চালকের গাড়ির ইঞ্জিনও যদি তৈরি করা হয় জিঞ্জিরার যন্ত্রাংশ দিয়ে তাহলো এমন গাড়ির  পরিণতি অনুধাবন করে আমাদের যাত্রীদেরই নিজেদের জানমাল রক্ষার্থে সচেতন হওয়া অত্যাবশ্যক।

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কোটা বিরোধী আন্দোলন একটি সময় উপযোগী, যৌক্তিক এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। যদিও এই আন্দোলনকে ভণ্ডুল করার কৌশল হিসেবে কোটার সুবিধাভোগী গোষ্ঠী নানা অপবাদ ও অপপ্রচার ছড়ানোর চেষ্টা করলেও বৃহত্তর সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে এবং সচেতন সাধারণ মানুষের সমর্থনে তা নস্যাৎ হয়ে গণ-মানুষের অধিকার আদায়ের দাবীতে প্রতিষ্ঠা লাভ করে তা বাস্তবায়নের পথে ধাবিত হয়েছে ।বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চাকুরীতে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও মহান মুক্তি যোদ্ধাদের জন্য কোটা ব্যবস্থার অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে,  তবে আমাদের দেশ ও জনগণের স্বার্থে সেই কোটা কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা যৌক্তিক ভাবে  ভেবে দেখা উচিত।

বাংলাদেশ কর্ম কমিশন এর মাধ্যমে  দেশের প্রশাসনের বিভিন্ন শাখায় যে নিয়োগ হয় সেই পদগুলো মূলত রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী পদ। এই চেয়ারগুলো যারা অলংকৃত করেন তাদের হাতেই রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের  ভিত্তি  নির্ধারণ হয়। স্বাধীন সার্বভৌম জাতি হিসেবে আমরা ৪৭ বছর পার করেছি, আমাদের হাতে হাতে প্রযুক্তি, ছোনের ঘরের পরিবর্তে ইট পাথরের ঘরে ঘুমাই,তিন বেলা খেয়ে পড়ে বাঁচার ব্যবস্থা হয়েছে , আসমানে আমাদের স্যাটেলাইট প্রদক্ষিণ করে,এক সময় ছেঁড়া বসনে আমাদের দিন কাটলে এখন কম বেশী সবাই রঙিন হরেক রকম পোশাক পরি।আজ এই  অবস্থায় আসতে কৃষকের হাড় ভাঙা শ্রম, গার্মেন্টসে কর্মরত লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের বিরামহীন পরিশ্রম, বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কর্মরত শ্রমজীবী মানুষের শ্রম এবং প্রবাসে অবস্থানরত এক কোটি মানুষের ত্যাগ ও তিতিক্ষা রয়েছে।দেশের  জনগোষ্ঠীর  বৃহৎ অংশ  উৎপাদন ও অর্থনীতির সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট, এই জনগোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডের উপর মূলত রাষ্ট্রের গতি সচল থাকে। এই জনগোষ্ঠীকে সঠিক ভাবে ও সঠিক পথে পরিচালনার জন্য  নীতি নির্ধারণ,নানা কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন,তাদের সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান ও নানাবিধ সেবা প্রদানের জন্য জনগণের  করের টাকায় রাষ্ট্র প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ শাখাগুলোতে মেধাবী, সৎ, সুশিক্ষিত,  উদ্যমী শিক্ষার্থীদের নিয়োগ প্রদান করবেন,  এটাই রাষ্ট্রের কাছে সাধারণ মানুষের কাম্য।কিন্তু জনগণ সেবার জন্য যাদের বেতন দিয়ে সংসার চালায়, তাদের কাছ থেকে পরিপূর্ণ সেবা কি তারা পায়? এর উত্তর,  সেবা পায় তবে তার জন্য আবার জনগণকে প্রায়শ বাড়তি টাকা গুনতে হয়, অর্থাৎ ঘুষ দিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অর্জনকারী একজন  মানুষ ঘুষ খায় এটা শুনতে বেমানান হলেও, কথিত শিক্ষিত সমাজ আজ দুর্নীতিগ্রস্ত এটাই বাস্তব সত্য। বছরের পর বছর পার হলেও এই অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণ হচ্ছেনা, এবং উত্তরণের পথও আমরা খুঁজছিনা।

 প্রশাসনের নিয়োগপ্রাপ্ত বেশভূষায় ভদ্রলোকেরা কেন দুর্নীতিগ্রস্ত এর কারণ খুঁজতে প্রথমত যে বিষয়টি উঠে আসে তাহলো এদের নিয়োগ প্রক্রিয়া।দেশের সরকারি চাকুরীর নিয়োগের প্রতিটি ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করে বাকি ৪৪ শতাংশ পদ সর্বসাধারণের মধ্য থেকে যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগের প্রথা চালু থাকলে এই ৪৪ শতাংশ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাবী নিয়োগের পরিবর্তে মন্ত্রী এম পি’দের তদবিরের ভিত্তিতে লক্ষ লক্ষ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের মেলা বসানো হয়।এই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ সরকারী চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী থেকে শুরু করে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা পর্যন্ত বিদ্যমান।আমাদের দেশে সরকারী  চাকুরী মানেই শুধু বেতনের টাকায় নিজেকে স্বনির্ভর করা এবং একটি নিরাপদ জীবন যাপনকে বোঝায়।কিন্তু চাকুরী মানে নিয়োগকর্তার সেবা করা এই ধারণাই আমাদের মধ্যে অনুপস্থিত।প্রশ্ন সরকারী চাকুরীর নিয়োগ কর্তা কে? উত্তর সরকার।কিন্তু সরকার পরিচালনার দায়িত্বশীলদের দায়িত্বভার অর্পণকর্তা কারা? উত্তর- জনগণ।সরকার পরিচালনার অর্থের যোগানদার কে ?উত্তর- জনগণ। জনগণ কেন তার কষ্টার্জিত অর্থ সরকারকে দেয়? উত্তর তার অর্থে জীবিকা নির্বাহ করা সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মচারী জনগণকে সেবা করবে। যেখানে জনগণের কাছে তাদের নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার কথা সেখানে উল্টো জনগণকেই তার কর্মচারীদের দ্বারা শোষিত হতে হয় এবং তাদের সেবা অর্থের (ঘুষের) বিনিময়ে কিনতে হয়।

জ্ঞান মানুষকে মহৎ করে এবং সুশিক্ষিত মানুষ হয় আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ।একজন মানুষ যখন জ্ঞান অর্জনের ভেতর দিয়ে নিজেকে তৈরি করার পর তার মেধা প্রমাণের সিঁড়িগুলো অতিক্রম করে করে কোন দায়িত্বে আসীন হন তখন তিনি বৃহত্তর স্বার্থকে সামনে রেখে দক্ষতা, সেবার মানসিকতা এবং সততার সমন্বয় ঘটিয়ে দায়িত্ব পালন করেন। এমন মানুষেরাই মূলত একটি জাতির দিক নির্দেশনা দেয় এবং একটি স্থিতিশীল সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখে। অপরদিকে কোন মানুষ যখন ঘাম না ঝরিয়ে মেধা প্রমাণের সিঁড়ি অতিক্রম ছাড়াই কোন দায়িত্বের আসন লাভ করে তখন তার মধ্যে প্রথমত প্রাপ্ত দায়িত্বভারের বিশেষ গুরুত্ববোধ উপলব্ধি হয়না।এছাড়া একজন অযোগ্য লোকের প্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হয় আত্মকেন্দ্রিক, যেহেতু তার যোগ্যতা  দিয়ে নিজেকেই  রক্ষা করতে অক্ষম তার কাছ থেকে বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষার আশা করা অনর্থক। এমন মানুষের কাছ থেকে দেশ ও জাতির  সেবার পরিবর্তে বরং ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভানাই বেশি।নিজেকে রক্ষার চিন্তায় নিমগ্ন এমন মানুষেরাই অসৎ পথে আত্মনির্ভর হয়ে অন্যকে ছাড়িয়ে যাবার প্রচেষ্টায় ব্যতিব্যস্ত থাকে। যার প্রমাণ রাষ্ট্র যন্ত্রের প্রতিটি ক্ষেত্রের বর্তমান বিরাজমান অরাজকতা এবং আমাদের সমাজের বাস্তব চিত্র।রাজনীতি থেকে শুরু করে করে রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্র আজ অযোগ্য মানুষদেই আধিক্যে।

মুক্তিযোদ্ধারা হচ্ছেন আমাদের আঠারো কোটি মানুষের মাথার মুকুট।বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন তাদের ঋণ রক্ত দিয়েও শোধ করার নয়।মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ তার জীবন। সেই জীবনকেই তুচ্ছ জ্ঞান করে অস্ত্র হাতে হানাদার মুক্ত করে বাঙালি জাতির অস্তিত্ব অক্ষুণ্ণ রেখে একটি মানচিত্র ও পতাকা উপহার দিয়েছেন আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা।স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ পুনর্গঠনে দেশের সেবায় অবদান ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিকভাবে সহায়তার জন্য ত্রিশ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ ছিল একটি সময় উপযোগী প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত।দেশ আজ তার সাতচল্লিশ বছরের সময়কাল পারি দিয়েছে।সময়ের প্রয়োজনে মেধা, প্রযুক্তি নির্ভর ও সুসভ্য জাতি বিনির্মাণে দেশকে নতুন করে পুনর্গঠন আজ প্রতিটি মানুষের মধ্যে অনুভূত।মুক্তি যোদ্ধার সন্তান ও তার উত্তরসূরিদের রক্তে দেশপ্রেমের ধারা বহমান।দেশের স্বার্থে ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার মিছিলে প্রথম পদচারণা হবে তাদের, আমরা সেটাই কামনা করি।সরকারী প্রতিটি চাকুরীর ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের পোষ্যদের জন্য ত্রিশ শতাংশ চাকুরী ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা বলবদ থাকার কারণে অনেক অসৎ মানুষ রাজনৈতিক সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধার সনদের অধিকারী হয়ে রাষ্ট্রের এই উদারতাকে অপব্যবহার করে চলছে।আমার দেখা ত্রিব্য আত্মমর্যাদা সম্পন্ন অনেক মুক্তিযোদ্ধা জীবনে কখনই সরকারের নিকট সনদের জন্য দ্বারস্থ হননি এবং তাদের সন্তানদের যোগ্য মানুষ হওয়ার মন্ত্রে দীক্ষিত করে বড় করেছেন।তাদের অনেকেই  যোগ্যতার মূল্যায়নে দেশ বিদেশে  সম্মানজনক পদে আসীন।প্রতিটি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার উত্তরসূরি বা পোষ্যদের উচিত যোগ্য মানুষ হয়ে রাষ্ট্রের সেবায় অংশগ্রহণ করা। কোন অনুগ্রহ বা অনুকম্পায় শুধু বেতন পাওয়ার আশায় একটি চাকুরীর জন্য রাস্তায় দাঁড়ানো তার পূর্ব পুরুষের বীরত্বকেই খাটো করার হয় । আমার দেখা ছাত্র জীবনের প্রতি স্তরে মেধার সাক্ষর রাখা অনেক বন্ধু ও বড় ভাইকে দেখেছি সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়া নীতির কারণে সরকারী চাকুরীর সুযোগ না পেয়ে বাধ্য হয়েই কোন বেসরকারী মাদ্রাসায় চাকুরী করছে অথবা শুধু জীবীকার প্রয়োজনে বিদেশের মাটিতে শ্রমিকের জীবন বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে।অথচ তার মেধা দেশকে এগিয়ে নেবার স্বার্থেই সরকারের কাজে ব্যবহার হওয়া উচিত ছিল।অথচ মুক্তিযোদ্ধার সনদধারী একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার শিক্ষা জীবনের সকল ক্ষেত্রে টেনেটুনে পাশ করা  সন্তান প্রথম দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকুরীর পদ দখল করে বসে আছে।আমার মতে এই অনিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরই প্রথম দায়িত্ব।আমরা যদি মেধা ও সততার উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রীয় কাঠামো দাঁড় করাতে পারি তাহলে হয়তো আজ যে চাকুরীকে কর্মসংস্থান ও জীবিকা অর্জনের ভিত্তি ভেবে যে দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হয়েছি সেই ধারণাই হয়তো সবার বদলে যেতে পারে। মানুষ হয়তো সরকারী চাকুরী না খুঁজে আরও ভালো কিছু উদ্ভাবনের মাধ্যমে নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিজেই করে সম্মানের সহিত মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখবে।

স্রোতের বিপরীতে লড়াই করার দৃঢ় মানসিক শক্তিতে বলীয়ান ছাত্র সমাজের ত্রিব্য আন্দোলনের  মুখে বাধ্য হয়েই সরকার এই ন্যায্য দাবির বাস্তবতা অনুধাবন করে দেশের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারী চাকুরীর নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল প্রকার কোটা বাতিলের  সিদ্ধান্ত নিয়েছে।যা অরাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি ঐতিহাসিক বিজয় এবং সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পরবর্তী আন্দোলন সংগ্রামের অনুপ্রেরণা। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত সরকারের  বড় বড়  অপকর্মের মাঝে এটি একটি  সময় উপযোগী বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। আমাদের বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধী ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মানুষ সামাজিক ভাবে অবহেলার স্বীকার। সমাজের এই শ্রেণীর মানুষের পাশে থাকা রাষ্ট্রের অপরিহার্য দায়িত্ব।সেই লক্ষ্যে তাদের  রাষ্ট্রের সেবায় অংশগ্রহণ ও সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকুরীতে কোটা সংরক্ষণ অত্যাবশ্যক।তবে অপমানের দৃষ্টি ভঙ্গীতে না দেখে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকুরীতে শুধু মাত্র অর্থনৈতিক প্রয়োজন মেটানোর তাগিদে অন্যান্য কোটা একটা নির্দিষ্ট সময়কাল নাগাদ বলবদ রাখার প্রয়োজন অনুভব করি।

কোটা বাতিল হয়ে গেলেই  সরকারী চাকুরীতে মেধাবীদের মেলা বসে যাবে এমন ভাবাও অর্থহীন।নিয়োগ বাণিজ্যের আড়তদাররা এখনো আমাদের মাথার উপর বসে আছে, সেই সাথে চাকুরীর প্রশ্নপত্র ফাঁস,দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে নিয়োগ ইত্যাদি সমস্যা সংক্রামক ব্যাধির মত  বিরাজমান।এবার সংগ্রাম শুরু হোক এই সংক্রামক ব্যাধিকে সমূলে নির্মূলের।
ছবি ইন্টারনেট থেকে নেয়া ......

বৃহস্পতিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

দাসত্বের বেড়ি পড়ান সভ্য সমাজের মানুষ হওয়ার চেয়ে গণমানুষের সুরে সুর মিলিয়ে গান গাওয়া সাধারণ জীবন সার্থক

একটি পুরস্কার বা পদক কাজের স্বীকৃতির পরিচয় বহন করে,পরবর্তী কাজের প্রেরণার পাথেয় হিসেবে অনুপ্রেরণা যোগায়, সমাজের মানুষের নিকট নতুন করে আবির্ভাব ঘটায়। অপরদিকে পুরষ্কারের বিপরীতের একজন পুরষ্কার গ্রহীতার যে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয় তাহলো, পুরষ্কার প্রাপ্তির পর পুরস্কৃত ব্যক্তির বিবেক,ইচ্ছা,আনন্দ,কণ্ঠ নতুন করে দাসত্বের শিকলে বন্দী হয়। কারণ কোন পুরষ্কার গ্রহণের সম্মতি প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে পুরষ্কার প্রদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে পুরষ্কার গ্রহীতার এক ধরণের আনুগত্যের অলিখিত চুক্তি সম্পাদন হয়ে যায়। ফলে পুরষ্কার প্রদানকারী ঐ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ বা জনবিরোধী কোন কর্মকাণ্ডের সমালোচনার ক্ষেত্রে পুরষ্কার প্রাপ্ত ব্যক্তির সারা জীবনের অর্জিত শিক্ষা ও সাধনা দ্বারা তৈরি হওয়া বিবেকবোধের উপর প্রাপ্ত পুরষ্কার একটি পাথর হয়ে চেপে বসে।
যদি কোন গানের কথামালা আমার হৃদয়কে আন্দোলিত করে, সুরে আমার শিরা উপশিরায় শিহরণ তুলে দেহকে ছন্দে দোলায়।এই ছন্দের তালে দুলে যাওয়াইতো আমার বেঁচে থাকার স্বাধীনতার সুখ।যে পুরষ্কার আমার ছন্দের  তালকে বাধাগ্রস্ত করে ওটার নাম পুরষ্কার নয় ,ওটা সন্মান নয়, ওটা পরাধীনতা।
দাসত্বের বেড়ি পড়ান সভ্য সমাজের মানুষ হওয়ার চেয়ে মুক্ত পাখির মতো গণমানুষের সুরে সুর মিলিয়ে গান গাওয়া সাধারণ জীবন সার্থক……

বুধবার, ২২ আগস্ট, ২০১৮

জীবিত অথবা মৃত প্রাণীর শরীর মাত্রই প্রাণীর আহার

জীবিত অথবা মৃত প্রাণীর শরীর মাত্রই কোননা কোন প্রাণীর আহার।জীবিত মানুষের মাংস অনেক মাংসাশী প্রাণীর প্রিয় আহার হলেও তারা মানুষের মাংস ভক্ষণ থেকে বঞ্চিত হয়, কারণ মানুষ বুদ্ধির কারণে অন্য প্রাণী থেকে আলাদা, ফলে আকৃতিতে ছোট হলেও অনেক বৃহৎ, হিংস্র ও শক্তিশালী প্রাণীর আক্রমণ থেকে সে নিজের শরীর ও প্রাণকে রক্ষা করতে ।হিংস্র মাংসাশী প্রাণীকে বঞ্চিত করে মানুষ জীবিত অবস্থায় অন্য প্রাণীর মাংস ভক্ষণ করলেও মৃত্যুর পর তাহার গলিত ও পচা শরীরকে পোকা মাকড়কে খাদ্য হিসেবে সপে দিতে বাধ্য হয়। অর্থাৎ, মানুষ অন্য প্রাণীর মাংস খেয়ে বেঁচে থাকার ঋণের শোধ জীবিত অবস্থায় করতে না পারলেও প্রাকৃতিক নিয়মে তার মৃত্যুর পর মৃত দেহ পোকা মাকড় ও কীট পতঙ্গকে খাবার সুযোগ দিয়ে শোধ করে।আবার জীবিত মানুষের শরীরের উপর ভর করে কৃমি তার প্রাণের স্বাদ গ্রহণ করে থাকে।মানুষ শুধু অন্য প্রাণীকে খায়ই না উকুন ও মশার মতো ক্ষুদ্র প্রাণীদেরকে তার রক্ত খাইয়ে বাঁচিয়েও রাখে।সৃষ্টি প্রকৃতির নিয়ম খাও এবং নিজেকেও খাওয়াও। আমি নিজে না চাইলেও সৃষ্টি প্রকৃতি এই ভাবেই চলছে এবং চলবে।অর্থাৎ এককে খেয়ে অন্যের জীবনের সুখ উপভোগ।এই নিয়ম এক দৃষ্টিকোন থেকে নিষ্ঠুর হলেও অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে অপার অনিন্দ্য সুন্দর।

উপরোক্ত আলোচনাটুকু করার কারণ আজ মুসলিম ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী কোরবানির ঈদ।এই দিনে সারা পৃথিবীতে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে প্রচুর চতুষ্পদ প্রাণী জবেহ করা হয় এবং এই জবেহ করা মাংসের আবার ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী সুন্দর একটি বণ্টন ব্যবস্থা রয়েছে।
নিয়ম হচ্ছে কোরবানির মাংস বানানোর পর সব মাংস সমান তিনভাগে ভাগ করতে হবে। মাংস সমান তিন ভাগ করার পর এক ভাগ সমাজের নিম্ন বৃত্ত মানুষের জন্য , এক ভাগ আত্মীয়স্বজনকে এবং এক ভাগ নিজে খাওয়ার জন্য রাখা হয়।
কোরবানির গরুর আরেকটি অংশ হচ্ছে চামড়ার টাকা। যা সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষদেরকে প্রদান করা হয়ে থাকে।

এই কোরবানির ফলে সমাজের যে শ্রেণীর মানুষের ম্যাকডোনাল্ড, কে এফ সি খাওয়ার সামর্থ নেই,এমন কি সারা বছরে একদিনেও মাংস কিনে খাওয়া হয়না তাদের ন্যূনতম মাংসের স্বাদ নেবার সুযোগ ঘটে।
কিন্তু প্রতি বছর কোরবানি ঈদ আসলেই কোরবানির এই মুসলিম রীতিকে কেন্দ্র করে কিছু ম্যাকডোনাল্ড,কে এফ সি , শুকুরের মাংস খাওয়া এবং পায়ে পশুর চামড়ার জুতা পরা উদারপন্থী মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোরবানির পশুর জবেহ হওয়ার কষ্টে কাতর হয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রূপে সরব হয়ে ওঠেন।অনেক উদারপন্থী বিদ্বান রয়েছে যারা কোরবানির মাংস দিয়ে ভূড়ীভোজ করার পর কোরবানির পশুর গলায় ছুরি চালানোর ব্যথায় ব্যথিত হয়ে ফেচবুকে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে এই রীতির তুখোড় সমালোচনার ঝড় তোলেন। 

এমন উদারপন্থীদের প্রতি পরামর্শ, এ ধরনের সমালোচনার পূর্বে প্রতিজ্ঞা করুণ, আজ থেকে কোন প্রাণের থেকে নিজের প্রাণের উপকরণ সংগ্রহ করবো না (উদ্ভিদ এবং প্রাণী) ।  দরকার হলে নিজের শরীর কৃমি, উকুন,মশা, ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য উপকরণ বানাবো কিন্তু নিজে পানি এবং বাতাস খেয়ে পৃথিবীর এই খাওয়া খাওয়ি নিয়মের প্রতিবাদ করে পোকা মাকড়কে এই রক্ত মাংসের দেহকে দান করে দেবো ……।
 সবাইকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা ……
শ্লোগান হোক… নিজে খাই এবং অন্যেকেও মনের আনন্দে খাওয়াই ...।   

শুক্রবার, ২৫ মে, ২০১৮

খুন যদি হয় সমাধান,তবে কেন “রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ"এই স্লোগান সম্বলিত প্রতিষ্ঠান ?

মাদক ব্যবসা কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে করা কখনোই  সম্ভব নয়। সমাজের যে সাধারণ মানুষটিকে মাদক ব্যবসা করতে দেখা যায় তার পেছনে হয়তো প্রশাসনিক অথবা রাজনৈতিক সহায়তা থাকে। সমাজের একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি কখনো নিজে হাতে মাদকের ফেরী করেনা, তারা এজেন্ট হিসেবে বেছে নেয় সমাজের বেকার হতাশাগ্রস্ত যুবকদের।তারাই এই যুবকদের দিয়ে যুব সমাজের হাতে মাদক তুলে দিয়ে যুব সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতাদের অর্থ বিত্ত বৈভবের গোপন সূত্র খুঁজতে গেলে দেখা যায় এর মূলে রয়েছে রাষ্ট্রীয় ভাবে নিষিদ্ধ কোন অবৈধ ব্যবসা।মাদক যখন কোন দেশের সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে সেখানে প্রশাসনের সহায়তা থাকে, মাদক যখন স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় সেখানেও প্রশাসনের সহায়তা থাকে । এই সহায়তা যদি শুরু থেকে না করা হয় এবং শক্ত হাতে দমন করা হয় তাহলেতো এর  বিস্তার ঘটেনা। মাদকের অভিযানের নামে সংশোধনের সুযোগ না দিয়ে  বিচার বহির্ভূত ভাবে মানুষ হত্যার উৎসব করার প্রয়োজন হয়না ।

এই প্রসঙ্গে আমার দেখা বাস্তব অভিজ্ঞতার একটু বর্ণনা করি, আমার জেলা রাজবাড়ীতে এক সময় ভারতীয় ফেনসিড্রিলের  রমরমা ব্যবসা হতো । যারা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের  মাঝে মাঝে  জীবন যাত্রার হালচাল দেখে বেশ ধনী মনে হতো। কিন্তু এমন সুখের সময় হঠাৎই পুলিশ এদের মাদক ব্যবসার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেতো, তখন মাদক ব্যবসায়ীর স্ত্রী নিয়মিত থানা কোট কাচারিতে দৌড়াদৌড়ি করতো। এভাবে মাস দুয়েক  ফেনসিড্রিল ব্যবসার জমানো সব টাকা পুলিশ,  উকিল, আদালতের পেছনে খরচ করে  স্বামীকে জেল থেকে জামিনে মুক্ত করে বের করে নিয়ে আসতো। বেরিয়ে আসার পর ওপার থেকে  আবার সীমান্ত প্রহরীদের টাকা পয়সা দিয়ে ট্রেনে করে জি আর পি পুলিশের সহায়তায়  ফেনসিড্রিলের চালান নিয়ে আসতো। আবার রমরমা ব্যবসা, নগদ টাকার উড়াউড়ি। সেই টাকার গন্ধে আবার পুলিশের হানা। আবার স্ত্রী’র কোট কাচারিতে দৌড়াদৌড়ি, থানা পুলিশ, উকিলের পেছনে ব্যবসার জমানো সমস্ত টাকা ঢেলে প্রিয় স্বামীকে মুক্ত কড়ে নিয়ে আসা। ওই মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশ বারবার মাদকসহ গ্রেপ্তার করলেও কখনো সংশোধনের সুযোগের জন্য মাদক আইনে সাজা ভোগ করে দীর্ঘদিন কারাবাস হতে দেখিনি।অর্থাৎ পুলিশের হাতে ধরা পড়া, জামিনে ছাড়া পাওয়া, আবার ব্যবসা করা এটাই ছিল তাদের জীবনের নিয়মিত অংশ ।যারা এই ব্যবসা করতো তারা মূলত কিছুদিন ইলিশ মাছ, মাংস দিয়ে ভাত  খেত আর ভালো কাপড় পড়তো,কিন্তু পাকা বাড়ী বানাতে পারতোনা কারণ, নগদ জমলেই পুলিশ হানা । ওর জীবন ঝুঁকির টাকায় হয়তো পুলিশ অফিসারের ফ্ল্যাটের কিস্তি পরিশোধ  হতো, রাজনৈতিক নেতার ভাই কিংবা বোন জামাইয়ের টাকার বাণ্ডিলের উপর বাণ্ডিল জমতো, কোটের উকিলের রুটি রুজি ভালো হতো। আর এই কারণেই ওই সব মাদক ব্যবসায়ীদের কখনো সংশোধনের জন্য সাজার ব্যবস্থা করা হতোনা। ওর সাজা হলে পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা,  উকিলদের উপরি আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়।

নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে মাদক ব্যবসা মূলত প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে মাদক বিক্রেতা,আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি, এই তিনের সমন্বয়েই সম্পন্ন হয়ে থাকে।দেশে যখন কোন বিশেষ অভিযান শুরু হয় তখন দেখা যায় যে লোকটা মাদক ব্যবসার টাকায় ইলিশ মাছ আর মাংস খায় ওই মারা পড়ে, যাদের  মাদকের টাকায় ফ্ল্যাটের কিস্তি পরিশোধ হয় তাদের গুলিতে এবং টাকার বাণ্ডিলের পর বাণ্ডিল রাখা মহৎ জনদরদী নেতাদের পরিকল্পনায়।দেশের ক্ষমতাসীনরা যদি জনদরদী হয়ে থাকে তবে হঠাৎ করে বিশেষ অভিযানের প্রয়োজন আছে কি? তাদের সুশাসনের ফলে মাদকসহ আইন শৃঙ্খলা অবস্থা সারা বছর স্বাভাবিক থাকবে।সরকারের উদ্দেশ্য যদি মহৎ হয়ে  থাকে তাহলে একটি জীবন্ত মানুষকে হত্যা না করে তাকে বিচারের সম্মুখীন করা হোক এবং মাদকের মূল হোতাদের আবিষ্কারের জন্য তাকে সরকারের পক্ষ থেকে নির্ভয় দিয়ে মিডিয়া এবং সমাজ সচেতন মানুষের উপস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় আইনে  বিচারের ব্যবস্থা করা হোক। রাষ্ট্র জনগণের কাছে পিতা মাতার মতো,সন্তানদের ভুল শুধরে সঠিক পথ দেখানোই তার  দায়িত্ব।  কিন্তু আমদের রাষ্ট্র অভিভাবক আমাদের  ভরণপোষণের ক্ষমতা রাখেনা, রুটি রুজির ব্যবস্থা করতে পারেনা,অথচ যখন  নিজহাতে হত্যা করার  ধৃষ্টতা দেখিয়ে  বর্বর উৎসবে মেতে ওঠে, তখন  বুঝতে হবে আমাদের রাষ্ট্র মাতা সৎ পিতার অধীনের সংসার করছে। হত্যা যদি সমাধানের পথ হয় তবে  জেল গেটের ফটকে লেখা “রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ” এ জাতিও নীতিবাক্যকে হাস্যকর মনে হয় এবং এমন প্রতিষ্ঠান নিষ্প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

সরকার যদি সত্যিই আন্তরিক ভাবে বাংলাদেশকে মাদকমুক্ত করতে চাই তাহলে প্রথম পদক্ষেপ হবে সরকারে ক্ষমতার মধ্যে থেকে কারা মাদক ব্যবসার পৃষ্ঠপোষকতা করে তাদেরকে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।এই পদক্ষেপ কার্যকর করতে পারলে মাদক সমস্যার ৬০% সমাধান। দ্বিতীয়ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সৎ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তৈরি তদন্ত কমিটির মাধ্যমে খুঁজে বের করতে হবে বাহিনীর কোন সদস্যের মাদক ব্যবসার  সহযোগিতায় যোগসাজশ রয়েছে এবং প্রমাণিত অসৎ সদস্যদের বাহিনী থেকে চাকুরীচ্যূতির মাধ্যমে বের করে দিতে হবে। এতে ৩০% সমাধান মিলবে।বাকী দশ ভাগ সমস্যার সমাধান মিলবে , মাঠ পর্যায়ে যারা মাদক সেবীদের নিকট সরাসরি মাদক পৌঁছে দিয়ে অর্থ উপার্জন করে তাদেরকে ঝটিকা অভিযানের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে সংশোধনের সুযোগ দেয়া।   

মঙ্গলবার, ১ মে, ২০১৮

সূত্র অনুযায়ী পৃথিবীর সমস্ত পেশার ভিত্তি কৃষক ও শ্রমিকের পেশা

সূত্র অনুযায়ী পৃথিবীর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ   পেশা কৃষক ও শ্রমিকের পেশা এবং পৃথিবীর সমস্ত পেশা গড়ে উঠেছে এই দুটি পেশার উপর ভিত্তি করে । পৃথিবীতে যে কর্মযজ্ঞ ও যা কিছু হচ্ছে তা এই দুটি পেশাকে কেন্দ্র করে।আজ অফিস আদালত, ব্যাংক বীমা,শিক্ষা, আবিষ্কার, রাষ্ট্র যন্ত্রের প্রতিটি বিভাগ, পৃথিবীর যাবতীয় ঘটনাপুঞ্জ এই দুটি পেশার উপর নির্ভরশীল। 
কৃষকের উৎপাদন ও শ্রমিকের শ্রমেই গড়ে উঠে ব্যবসা বাণিজ্য, লেনদেন, কর্পোরেটদের স্যুট কোট টাইয়ের পরিপাটি পোশাক।যদি কখনো কৃষক তার খাদ্য উৎপাদন ও শ্রমিক তার পণ্য উৎপাদন কিছু দিনের জন্য বন্ধ করে দেয় তাহলে রাষ্ট্র তথা পৃথিবী যাবতীয় তন্ত্র মন্ত্র ,প্রণালী, পদ্ধুতি স্থবির হয়ে পড়বে।প্রয়োজনে  বাঁচার তাগিদে ব্যাংকার ও কর্পোরেট কর্মীদের  স্যুট কোট পরে মিল কারখানায় গিয়ে পণ্য উৎপাদন করতে হবে, প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি তার মন্ত্রী ও সচিবদের নিয়ে তুলতুলে চেয়ার ফেলে হাতুড়ী কাস্তে হাতে মাঠে নামতে হবে ।

কৃষক ও শ্রমিকের ঘাম যত বেশী ঝরে রাষ্ট্রযন্ত্রের চেয়ারগুলো তত বেশী নরম ও আরামদায়ক হয়ে ওঠে। অন্যদিকে কৃষক ও শ্রমিক যদি তার কর্মযজ্ঞ অব্যাহত রাখে অন্যদিকে অন্য পেশাজীবী মানুষ যদি তাদের কাজ কর্ম বন্ধ রাখে তাতে সামাজিক নিয়ম শৃঙ্খলার কিছুটা ব্যহত হলেও সমাজ বা রাষ্ট্রের ভিত্তির কোন ক্ষতি সাধন হবেনা ।কোন লেখক যদি মারা যায় তখন আমরা বলি তার জীবদ্দশায় ১০০টি বই লিখে গেছেন আমাদের জন্য। অভিনেতার ক্ষেত্রে বলি ২০০ সিনেমা করে গেছেন আমাদের জন্য।একজন কৃষক মারা গেলে আমরা কখনো কি এভাবে হিসাব করি , তার জীবদ্দশায় শ্রমে ঘামে আমাদের জন্য তিনি কত টন খাদ্য উৎপাদন করেছেন  ,অথবা একজন কারখানা শ্রমিকের ক্ষেত্রে কি বলি তার জীবদ্দশায় এক লক্ষ পণ্য উৎপাদন করে আমাদের অর্থনীতিতে ভূমিকা রেখে গেছেন এই মহান মানুষটি । দুঃখের বিষয় সমস্ত পেশার অভিভাবক, সবচেয়ে সম্মানিত কৃষক ও শ্রমিকের পেশা রাষ্ট্রীয় ভাবে আজও বৈষম্য ও অবহেলার স্বীকার। আজকের এই মে দিবসে আমাদের সকলের কাম্য, কৃষক শ্রমিক তার প্রাপ্য সম্মান নিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হোক এবং তাদের  ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম আর বেগবান হয়ে উঠুক । …… 

পৃথিবীর সমস্ত শ্রমজীবী মানুষদের প্রতি রইলো মহান মে দিবসের শুভেচ্ছা ……।।

রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

তুষারের শুভ্রতায় নবরূপে উদ্ভাসিত প্যারিস নগরী

সদ্য শরীরের কাঁটাছেড়া অংশে সকাল থেকে ব্যথার তীব্রতা বেড়েই চলছে। ব্যথানাশক ঔষধ সেবনে উপশমের চেষ্টা। ব্যথা নিয়েই মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে বাসায় একাকী দিন যাপনের প্রস্তুতি। প্রকৃতি আগাম আভাস না দিয়ে হঠাৎ করেই শুরু করেছে বাতাসে তুষারের ওড়াউড়ি। যে দৃশ্যর অবতারণ সাধারণত প্যারিসে খুব একটা মেলেনা। মনে হল দিনটা বাড়তি প্রাপ্তি দিয়ে শুরু হল। ড্রয়িং রুমের প্রতিটি পর্দা তুলে দিয়ে সোফায় শুয়ে শুয়ে প্রকৃতির আপন মনে এমন খেলা করার দৃশ্য হৃদয়ে এক ভিন্ন রকম শিহরণ জাগিয়ে মুহূর্তগুলো রাঙিয়ে দিচ্ছে। বেলকোনিতে মাঝে মাঝে দুটো কালো কবুতর এসে সঙ্গ দিয়ে আবার উড়ে চলে যাচ্ছে। সাথে প্রিয় রবি সুর। স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী হলাম প্রকৃতির এমন আতিথেয়তায়!

এমন ভালোলাগা শুধু নিজে উপভোগ না করে প্রযুক্তির আশ্চর্য উদ্ভাবন ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে কিছু সময় ভাগাভাভাগি করলাম বন্ধুদের সঙ্গে। কিছুক্ষণের মধ্যে সামনের ছোট্ট পার্কটির সমতল ভূমির উপর প্রকৃতি তুষারের সাদা মাদুর বিছিয়ে দিলো। বৃক্ষরাজির শাখাগুলোর কাণ্ড পরিণত হল থোকা থোকা সাদা পুষ্পের ন্যায়। 

দীর্ঘদিন অবসর কাটানো ক্যামেরােকে জাগিয়ে তুললাম প্রকৃতির এমন রূপ ধরে রাখার জন্য। অসুস্থ শরীর, কিন্তু মনটা বেশ চনমনে হয়ে উঠেছে এরই মধ্যে। এভাবে দু‘দিন পার করলে পুরো প্যারিস কি রূপে উদ্ভাসিত হয়েছে সেই কৌতূহল ভেতরে ভেতরে তাড়া দিচ্ছে তা বেশ অনুভব করছি, কিন্তু সদ্য হসপিটালের অপারেশনের টেবিল থেকে ফেরা দেহ কি পারবে আমাকে শুভ্র সাদা প্যারিসের রূপ ঘুরে দেখাতে, সেই আশংকায় দোদুল্যমান মন। ভেতরে সাহস সঞ্চার করে নিজেকে গৃহকোণ থেকে মুক্ত করে শ্যেন নদীর দিকে রওনা হলাম।   

বাঙলার প্রকৃতিতে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে সারা দিন মেঘলা আকাশ গুড়িগুড়ি বৃষ্টির দিনে গৃহবন্দী জীবনের যেমন আলাদা স্বাদ রয়েছে। তেমন এখানকার প্রকৃতিতে শিমূল তুলোর মতো শুভ্র তুষারের উড়ে উড়ে ঝরে পড়ার দৃশ্যও দেহ মনে এক অন্যরকম শিহরণ জাগায়। প্রতি বছর প্যারিসের আশেপাশের শহরগুলোতে তুষারপাত হলেও গত পাঁচ বছরের মধ্যে প্যারিস নগরী তুষারে শুভ্র সাদায় সাজেনি। ক্রিসমাস বা নয়েল উৎসবগুলোতে কৃত্রিম তুষারে সজ্জিত করা হয় নগরীর বড় বড় পর্যটন ও জনপ্রিয় জনবহুল এলাকাগুলো। কৃত্রিম সজ্জা থেকে এই শহর নিজের শরীরকে মুক্ত করেছে জানুয়ারির শেষে, কিন্তু আজ প্যারিসকে প্রকৃতি সাজিয়েছে আপন হাতে। ফ্রান্সে চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে শ্যেন নদী সাধারণ সীমানার উপর দিয়ে পানি’র স্রোতের ধারা প্রবাহিত করছে, ফলে প্রমদতরিগুলো কূলে নোঙ্গর করে অলস সময় পার করছে, তুষারের শুভ্র প্রলেপের কারণে নদীর দুই ধারের সারি সারি জাহাজগুলোকে দূর থেকে মনে হচ্ছে সেনের তীর ঘেঁষে সদ্য গড়ে উঠা পাড়া গাঁয়ে উৎসব চলছে।    


রাস্তায় যান চলাচল স্বল্পতার কারণে প্যারিস শহুরে রূপ হারিয়ে কোথাও সাদা বিরান ভূমির মতো, আবার রাস্তার পাশের বিস্তীর্ণ গাছগাছালি ঘন তুষারের আবরণে ঢাকা পড়ে সাদা বনভূমিতে রূপান্তর হয়েছে। মার্চ থেকে ফ্রান্সে বসন্তের শুরু কিন্তু এখনো ফুলেদের আগমনী চিহ্ন চোখে পড়েনি। কিন্তু প্যারিসের এভেনিউগুলোর দু’পাশের সৌন্দর্য বর্ধনশীল সারিবাধা গাছগুলো যেন তুষার দিয়ে সাদা চেরি ফুল ফুটিয়ে দর্শনার্থীদের মধ্য বসন্তের অগ্রিম রূপের সৌন্দর্যে বিমোহিত করছে। বিখ্যাত ভাস্করদের তৈরি ভাস্কর্যগুলোর উপর প্রকৃতি নতুন করে অলঙ্করণ করেছে, সে দৃশ্য একেবারে কম মনোহর নয়। এমন দিনে প্যারিসের পথে যে কারও স্বর্গীয় অনুভূতিতে দেহ মন আচ্ছাদিত হতে পারে।   































মনে হল, প্যারিসের এমন রূপের দিকে তাকালে প্রেমে পড়বেনা এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই দায়। শত শত বছর ধরে হাজার হাজার শিল্পী প্যারিসের রুপের উৎকর্ষ সাধনের যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তা আজ পণ্ডশ্রমে পর্যবসিত। প্যারিসের আজকের রূপের কাছে শিল্পকলার সমস্ত সৃষ্টিই যেন পরাজিত! যে হৃদয় পাথরসম অনুভূতিহীন প্যারিসের আজকের প্রকৃতি সেই হৃদয়ে প্রাণের সঞ্চার করতে দুহাত বাড়িয়ে ডাকছে। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য ক্যামেরা হাতে বেড়িয়ে পড়েছে অসংখ্য সৌন্দর্য় পিপাসু্ মানুষ নিজেকে স্মৃতি করে রাখার জন্য। বৃষ্টির দিনে বাংলার দুরন্ত কিশোর-কিশোরী যেমন বৃষ্টিতে ভিজে তার দুরন্তপনা ও দুুষ্টুমিতে প্রকৃতির হেয়ালিপনাকে সার্থক করে তোলে, তেমনি প্যারিসের বুকে বেড়ে ওঠা দুরন্ত কিশোর-কিশোরীর দলও প্রকৃতির এই উৎসবের দিনে উজার করে উচ্ছ্বাস ঢেলে দিচ্ছে। বাংলার বর্ষা, বসন্ত, শরৎ যেমন প্রেমিক প্রেমিকার মনে দোলা দেয়, অনুভূতিতে ভিন্নতা আনে, হৃদয়ের রংয়ের বৈচিত্রতা আনে, পশ্চিমা প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয়ে আমাদের মতো এতো বৈচিত্র্য না থাকলেও আজকের প্যারিসের প্রকৃতি অবশ্যই ওদেরকে রোমাঞ্চিত করছে। 

তুষার শুভ্রতায় নবরূপে উদ্ভাসিত প্যারিস নগরী 


আলোকচিত্র: মুহাম্মদ গোলাম মোর্শেদ,