রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

আমার স্মৃতিতে কবি জামাল হাবিব হাবু

পৃথিবীর অমোঘ নিয়মে মানুষের জীবনে মৃত্যু আসবে এটাই চিরন্তনকিন্তু কিছু মানুষের মৃত্যুকে কখনোই মৃত্যু বলা যায়না,বরং মৃত্যুর মধ্য দিয়েই যেন নতুন করে পুনর্জন্মজীবন যদি হয় মহৎ কর্মে পরিবাহিত তাহলে সেই জীবনের অবসানের মধ্যেই পরম সার্থকতাকারন তার রেখে যাওয়া কর্মের মধ্যে দিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম মানবগোষ্ঠীর মস্তিস্কের চিন্তা ও চেতনার বহি:প্রকাশে আরো সুন্দর ও মহিরুপে পৃথিবীতে বিচরণ ঘটে।  কবি জামাল হাবিব হাবু ঠিক তেমনি একটি  প্রদীপের নাম
  সুদূর প্রবাসে বসে কবির  এই ধরনির লোকারণ্য ছেড়ে চলে যাওয়ার সংবাদ শুনে আমি স্তম্বিত হয়েছিলাম,এই ভেবে যে, তার সাথে আর দেখা হবেনা 

আমার জীবনে কবির শিল্প সত্বার সাথে পরিচয় ঘটার পূর্বে পরিচয় ঘটেছিলো তার ব্যক্তি সত্বার সাথে, আমার বাবার কর্মজীবনের সহকর্মী হওয়ার সুবাদেব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন আমার অভিভাবক সমতুল্যতার অনেক উপদেশ  আমার জীবনে এগিয়ে চলার পথে নির্দেশনা দিয়েছেযা আজীবন কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ থাকবেতাছাড়া, জীবনদশায়  প্রত্যেক শ্রেনীর মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এক ব্যতিক্রম উদাহরণ ছিলেন  অতি সাধাসিধে জীবন যাপনে অভ্যস্ত এই কবিদৃষ্টান্ত স্বরুপ, আমার সম্পাদনায়  ২০০৪ সালে প্রয়াস নামে রাজবাড়ী সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদের বার্ষিকী প্রকাশনায় তার লেখা একটি স্মৃতি সংগীত প্রকাশের সুযোগ ঘটেগীতি কবিতাটিতে তার কর্মস্থল  রাজবাড়ী সরকারী কলেজের প্রত্যেক অধ্যক্ষের মহৎ গুন ও অবদানের বর্ণনা এত উদারতা,কাব্যিক এবং ছান্দ্যিক রুপে উপস্থাপন করেছেন যে আকাশের মত বিস্তৃত হৃদয় না থাকলে তা সম্ভব নয়

যখন একটু পরিণত বয়সে উপনিত হই,  তখন আমার পরিচয় হয় কবি  জামাল হাবিব হাবুর এক দার্শনিক স্বত্বার সাথেপ্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা,মানব জীবনের রীতি নীতি, আধ্যাত্মিকতা  ইত্যাদি বিষয়ে ছিলো তার এক নিজস্ব চিন্তাধারাযা তার লেখা গান, কবিতা ও অন্যন্য লেখালেখি এবং তার জীবনাচর্চায় ফুটে ওঠে এক  স্বাতন্ত্রিক বৈশিষ্টেআলাপচারিতায় ফুটে উঠতো,সমাজের শোষিত শ্রেনীর  পক্ষে এবং শোষক শ্রেনীর বিপক্ষে তার নৈতিক অবস্থানএছাড়া জগত সৃষ্টিকর্তার   প্রতি তার গভীর বিশ্বাস ও ভক্তির বহি:প্রকাশ ঘটতো  কৃতজ্ঞচিত্তে
কবির স্পর্শকাতর ও ভাবাবেগ হৃদয়ের কারনে অনেক সময়ই  তাকে পৃথিবীর কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছেফলোশ্রুতিতে তার রচিত অনেক পান্ডুলিপি প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হারিয়ে যায় এবং অনেক লেখা নষ্ট হয়ে যায়এ জন্য  গভীর বেদনা বয়ে বেড়ানোর ভাব ফুটে উঠতো তার একান্ত আলাপচারিতায়

তিনি যেমন বিভিন্ন গুনিজন সংবর্ধনায় সম্মানিত হয়েছেন তেমনি তারও দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন ছিলো রাজবাড়ীর জেলার সকল সাংস্কৃতিক কর্মী ও গুনিজনদের এক মঞ্চে সংবর্ধনা আয়োজনের মাধ্যমে সম্মানিত করা সেই চেষ্টায়  দীর্ঘদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করলেও নানা প্রতিকূলতার কারনে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হওয়ার আক্ষেপ প্রকাশ পেয়েছে  তার বেদনাভরা কন্ঠে

কবি জামাল হাবিব হাবুর উপস্থিতি ছিলো রাজবাড়ীর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অভিভাবকসমতার এই চলে যাওয়ায় একটা শূন্যতা তৈরী হলেও তার রেখে যাওয়া সৃষ্টিকর্ম  দিক নির্দেশনা দেবে এবং তার সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন গভীর শ্রদ্ধাভরে


কবির জীবন কাল :জন্ম ১৯৩৬-মৃত্যু ২৭ এপ্রিল ২০১৪

শনিবার, ২ আগস্ট, ২০১৪

বাঙ্গালীর নৈতিকতাবোধ

কোন এক সময়  মানুষের অশিক্ষা ,অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের কারণে ন্যায় অন্যায় বিচারবোধ উপলব্ধি না করে নানা লোমহর্ষক কর্মকান্ড ঘটাতো। আমরা দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলে থাকি সেই মধ্যে যুগিয় বর্বরতার কথা। ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য যুগে যুগে আবির্ভাব হয়েছে নানা দার্শনিক ,সামাজিক ,রাজনৈতিক চিন্তাধারা এবং ধর্মীয় বিধিবিধান। অনেক মহামানবদের আত্বত্যাগ,সাধনা ও রক্তের ফসল আমাদের আজকের এই ধরনী এবং সভ্যতা।

মানব সভ্যতার স্বর্ণ যুগে আজ আমাদের অবস্থান। আজও জ্ঞান বিজ্ঞানে অগ্রগামী জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা  তাদের পূর্ববর্তীরদের ভূল থেকে শিক্ষা নিয়ে  মানবতা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার চর্চায় মগ্ন রেখেছে। ঠিক তখন আমারা কি চর্চা করছি ?যে বাঙ্গালী জাতীগোষ্ঠী নিয়ে আমাদের এত গর্ব সেই অহংকারের  জাতীকে আজ কোন পথে নিয়ে যাচ্ছি। অনেক গ্লানী ,দুঃখ  ,দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম ও রক্তপাতের মধ্যে দিয়ে শত শত বছরের পরাধীনতার শৃংখল ছিন্ন করে আমাদের পূর্ববর্তীগন একটি স্বাধীন জাতীগোষ্ঠী উপহার দিয়ে গেলো। সেই স্বাধীনতার ফলাফল কি ?কি চর্চা করছে এই জাতীগোষ্ঠীর মানুষ। আজ বাংলাদেশের মানুষ পৃথিবীর বৃহত্তর চারটি ধর্মীয় দর্শন চর্চা করে,কেউ কেউ কোন ধর্মীয় দর্শন বিশ্বাস না করে নিজেকে মানবতাবাদী পরিচয় দিয়ে সেরা মানুষ দাবি করে থাকে,অনেকেই আবার বাংলাদেশ বলতেই চেতনায় কাতর হয়ে যায় ,মঙ্গল প্রদীব জ্বালায় , পতাকার রঙে শাড়ী পানজাবী পড়ে,কেউ শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কমিউনিজম আন্দোলন করে জীবন বিলিয়ে দিচ্ছে,কেউ বাংলার মানুষের মত প্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গনতন্ত্রের আন্দোলন সংগ্রাম করে রাজপথ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। পৃথিবীর জ্ঞান বিজ্ঞানের সমস্ত শাখা প্রশাখা আজ বাংলাদেশে রপ্তানী হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে কেউ হয়েছেন গনতন্ত্রের মানষ কন্যা ,কেউ আপসহীন নেত্রী ,কেউ পল্লীবন্ধু ,আরো অনেক উপাধিতে ভূষিত আমাদের কান্ডারী জাতীর মাঝি মাল্লাগন। এদের   নেতৃত্বাধীন জাতীর সমস্ত জ্ঞান চর্চার ফলাফল স্বরুপ আজ যা দেখতে পাচ্ছি  তাহলো,বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী ধারী যুবক রাষ্ট্রের সেবক ও সম্মানে আসনে বসে নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে ভিক্ষুকের মনোবৃত্তি নিয়ে হাত বাড়িয়ে ঘুস খাচ্ছে। একজন জনপ্রতিনিধি জনগনের প্রতিশ্রুতি পূরণের পরিবর্তে, নিজেকে সর্বোচ্চ তুষ্টির জন্য সৌদি আরবের গরিব মিস্কিনের উদ্দেশ্যে পাঠানো দুম্বার  মাংস গরিবকে না দিয়ে নিজের বাড়িতেই  রান্না করে পরিবার পরিজন ও নেতাকর্মী   নিয়ে ভূরিভোজ করছে। এখন একজন ছাত্রের আর পড়াশুনার পাশাপাশী শিল্প সাংস্কৃতিতে মন বসেনা, লুটতরাজ রাজনৈতিক দলের ফ্রন্ট লাইনে আসার জন্য সে মানুষ কোপাতেই ভালোবাসে।  একজন ছদ্দবেশী কমিউনিষ্ট নিজেকে গণমানুষের নেতা দাবি করলেও পাজামা পানজাবির ভাঁজ , পাজেরো গাড়ি ও মন্ত্রীত্বের স্বাধ দীর্ঘায়ী করার জন্য লুটেরাদের দালালী করতে আর লজ্জাবোধ করেনা। একজন চিকিৎসকের এখন আর একজন মুমূর্ষু রোগীকে দেখে হৃদয়ের মানবিকতার দুয়ার খোলেনা,বরং গুলশানের ফ্লাটের কিস্তির টাকা পরিশোধের জন্য একজন রোগীকে একবারের পরিবর্তে তিনবার পেটে সার্জারির ছুরি চালানোর ব্যবস্থা করে। একজন বুদ্ধি ব্যাবসায়ী  রাষ্ট্রীয় পদক ধরার দৌড়ে এগিয়ে থাকার জন্য অশিক্ষিত ও মূর্খ রাজনৈতিক নেতার ভিত্তিহীন মন্তব্যকে সত্য রুপে প্রতিষ্ঠার জন্য টিভি টকশোতে ঘন্টার পর ঘন্টা যুক্তি প্রদার করে। অনেক ধার্মিক নিজেকে সমাজের সেরা মানুষ দাবি করলেও অন্য ধর্মের মানুষের উপর অত্যাচার ও উপাসনালয় ভেঙ্গে ফেলা পূর্ণের কাজ মনে করে। আর মানুষ হত্যা যেন ইদুর বিড়ালের মৃত্যুর মত, বিচারতো দুরের কথা যা আজ রাষ্ট্রীয়  রেজিষ্টার খাতায় এন্ট্রিই   হয়না, ফলে সরকারের ষ্টেশনারী খরচ সাশ্রয় হয়। আর এসবের দোহাই দিয়ে অনেক এনজিও ও মানবাধিকারের ফেরিওয়ালারা বিদেশী দাতা সংস্থার ভিক্ষা এনে নিজেদের ব্যাংক ব্যালেন্স ভারী করছে।   মাছ ব্যাবসায়ী ফল ব্যাবসায়ীকে,ফল ব্যাবসায়ী  মাছ ব্যাবসায়ীকে ফরমালিন খাওয়াচ্ছে , এরুপ সবার মধ্যে দ্রুত অর্থ বিত্তের মালিক হওয়ার লালসা ডুকিয়ে দিয়ে আমাদের  সবাইকে একে অপরকে দ্বারা বিষ খাত্তনোর ব্যাবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এভাবে পূঁজিপতিদের ব্যাবসার বাজার সৃষ্টি করে জাতিকে ধংসের মুখে ঠেলে দিয়ে  এ্যাপোলো,স্কয়ার, ল্যাব এইড,ইউনাইটেডের মত রক্তচোষাদের রমরমা স্বাস্থ্য বানিজ্যের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে । মূলত, যে দেশের প্রধানমন্ত্রী চোর খুনিদের লালন পালন ও চরিত্রবানের সনদ প্রদান করে সেই দেশের সারারণ মানুষের চরিত্রহীনতায় অবাক হওয়ার কিছু থাকেনা।দেশের প্রধান আদর্শের চেয়ার যদি আদর্শহীনতার মডেল হয় সেই জাতির চেয়ে হতভাগা জাতি আর থাকতে পারেনা। আর তাইতো জাতির চেতনার উৎস ও শ্রেষ্ট সন্তান মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ক্রেষ্টের বরাদ্ধকৃত স্বর্ণের অর্থ চুরি  একজন মন্ত্রী  বা সচিবের স্বাভাবিক কর্মকান্ডের আওতায়ই পড়ে। যে দেশের মানুষের বৃহৎ একটা অংশে আফ্রিকার বুভুক্ষ জনগোষ্ঠীর প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে, সেই দেশে শত কোটি টাকা খরচে  বৃহৎ মানব পতাকার রেকর্ড সৃষ্টির সৌখিন দেশ প্রেম হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই মনে হয়না।

আজকের এই সভ্যতার মোড়কে ঢাকা বর্বরতার যুগে যে মানুষগুলো এখনো সত্য, ন্যায় ও সুন্দরের ঝান্ডা হাতে দাড়িয়ে আছে এবং জাতীর মুক্তির স্বপ্ন দেখে আত্নবিসর্জন দিয়ে সংগ্রাম করছে তাদেরকে সশ্রদ্ধ ছালাম ও সমর্থন এবং তাদের ডাকে সাড়া দেবার আহবান।

মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০১৪

আমার ঈদ আনন্দ

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে মুসলিম সম্প্রদায়ের খুশির পবিত্র ঈদ উল ফিতরের দিনটি। এই দিনটিকে ঘিরে সেই ছেলে বেলা থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত নানা অনুভূতি ও অনেক স্মৃতি জরিত।সেই ছেলে বেলায় যখন ঈদের নামাজ পড়তে যেতাম তখন দেখতাম কিছু মানুষ ঈদ গাঁয়ের প্রবেশ দ্বারে ভিক্ষার থালা হাতে দাড়িয়ে থাকতো, আবার কিছু মানুষ ঈদের আগে ফিতরার টাকার জন্য সচ্ছল মানুষদের দ্বারে দ্বারে হানা দিতো। তখন এ ব্যাপারগুলো তেমন ভাবাতোনা কিন্তু যখন বড় হয়েও ঐ মানুষগুলোকই এত বছর পরেও এই খুশির দিনে ঈদ গাঁয়ে ভিক্ষা করতে দেখেছি, ফিতরার টাকার জন্য দৌড়াতে দেখেছি তখন সত্যি ভাবনার দোলায় দোল খেয়েছি।বাংলাদেশের কত মানুষ মাস বছরের মধ্যেই ভাগ্য বদলে শত শত কোটি টাকার মালিক হচ্ছে কিন্তু এই জনগোষ্ঠীর ভাগ্য যেন যুগের পর যুগ পার হলেও পরিবর্তন হয়না। এই জনগোষ্ঠীর জন্মই হয়েছে যেন ভিক্ষাবৃত্তির জন্য। যখন ভাবি আমরা সবাই উলঙ্গ দেহে পৃথিবীতে আসি কিন্তু এই সমাজ ব্যবস্থা কাউকে খুশির দিনেও ভিক্ষার থালা হাতে রাস্তার ধারে বসিয়ে দেয় আর কাউকে ঝলমলে পোষাকের ঝলকানিতে সুন্দর করে তোলে তখন আামার ঈদ আনন্দ ফিকে হয়ে যায়। যেদিন দেখবো বাংলাদেশের কোন মানুষ যাকাতের কাপড়ের জন্য কোন ধনির বাড়ীর গেটের সামনে ভিড়ে পায়ে পিষ্ঠ হয়ে মারা যাবেনা,ঈদের খুশির দিনে অনাথের  মলিন মুখ দেখা যাবেনা, ফিতরার অর্থ গ্রহনের কোন মানুষ খুজে পাওয়া যাবেনা, সেই দিন সত্যি নিজেকে একজন গর্বিত বাঙ্গালী এবং মুসলিম মনে হবে।

বুধবার, ১৮ জুন, ২০১৪

বত্রিশ কোটি হাতে আজ নেশাখোরদের পড়ানো শৃংখল...!

হত্যা , রাহাজানি ,নতুনত্ব লোমহর্ষক ঘটনার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের প্রতিদিনের সূর্ষ্য পশ্চিম আকাশে অস্তমিত হচ্ছে। কিন্তু যারা দেশের চালকের আসনে ষোল কোটি মানুষের অবিভাবক হয়ে বসে আছেন ,তাদের দৃষ্টিতে দেশ তাদের হাতে সেরা সময় পার করছে। রঙিন শাড়ী ,মুক্ত ঝড়া হাসি , স্যুট কোর্ট এবং তাদের গলায় পেচানো টাই এর বন্ধন দেখে মনে হয় আসলেই তারা কত সুখী ও সফল জাতীগোষ্ঠীর অভিভাবক। অন্তরে সুখ না থাকলে কি এমন বেশভূষা শোভা পায়। ক্ষমতা বলে কথা ! ক্ষমতা স্বাদ মাদকের নেশার মত । এক জন মাদক সেবী নেশা নিবারণের জন্য কোন খুন বা অপকর্ম করলে যেমন আমাদের অবাক হওয়ার কিছু থাকেনা। আবার নেশাখোর যখন খুন করে নেশার ঘোরে থাকে তখন তার কাছে খুনের জন্য অনুতপ্ততা বা অনুশোচনা কাজ করেনা বরং পৃথিবীকে স্বর্গের মত সুন্দর মনে হয়। তেমনি বাংলাদেশ আজ ক্ষমতা আসক্ত নেশাখোরদের দখলে……ক্ষমতার নেশা কাটানোর জন্য ক্ষমতা খেকুরা শত শত লাশের ওপর সওয়ার করে ক্ষমতার আসনে বসলেও তাই আজ আমাদের অবাক লাগেনা। ক্ষমতার নেশার ঘোরে তাই ওদের কাছে মনে হয় বাংলাদেশ সুখী সমৃদ্ধ স্বর্গভূমি। ষোল কোটি মানুষের বত্রিশ কোটি হাতে আজ নেশাখোরদের পড়ানো শৃংখল।

শনিবার, ১৪ জুন, ২০১৪

র‍্যাব এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস

২৬ মার্চ ২০০৪ সালে বাংলাদেশের সামরিক,আধাসামরিক ও বেসামরিক বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত হয় রাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)। শুরুতে এই বাহিনীর কার্যকক্রম সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আস্থা অর্জনে সমর্থ হয় কারণ তৎকালীন সময়ে অস্থিতিশীল সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন ও সন্ত্রাস,চাঁদাবাজীর মূল উৎপাটনের জন্য তরিৎ অভিযান পরিচালনা সক্ষম ও বিশেষ প্রশিক্ষণ সম্পর্ণ এমন একটি শক্তিশালী আইন শৃংখলা বাহিনী সময়ের দাবী ছিলো ।এছাড়া অনেক বড় বড় সন্ত্রাসী সংগঠন ও সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে অনেক দুঃসাহসী সফল অভিযান পরিচালনা করে তাদের সক্ষমতার স্বাক্ষর মানুষের কাছে তুলে ধরেন। শুধু বাংলাদেশেই নয় বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও এ ধরনের বিশেষ আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে। শুরুতে এই বাহিনীর কার্যক্রম আশা জাগানোর হলেও এর পরের গল্প শুধুই হতাশার,বেদনার এবং কান্নার। আইন শৃংখলা রক্ষার নামে এর অন্তরালে এই বাহিনীকে দিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ের ক্ষমতাশীনরা এই দশ বছরে কি করেছে তার বিশদ বিশ্লেষন এবং কি উদ্দেশ্যে মূলত ব্যবহার করা হচ্ছে তা আজ গভীর ভাবে ভেবে মানুষের সচেতন ও শোচ্চার হবার সময় এসেছে।

একটি দেশের দুষ্কৃতিকারী মহল দ্বারা নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড সংগঠিত হবে ও তৎপরতা চলবে এবং তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযান পরিচালনা করে অপরাধীকে ধরে আইনের আওতায় এনে বিচারের সম্মুখীন করা ও সমাজের অপতৎপরতামূলক কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করাই মূলত দেশের আইন শৃংখলা বাহিনীগুলোর কাজ। সেই বাহিনীই যদি কোন প্রকার জবাবদিহিতা ছাড়া নিজ হাতে বিচার বিভাগের দায়িত্ব তুলে নিয়ে জল্লাদের কাজটিও সম্পন্ন করে ফেলে এবং তা সরকারের নির্দেশেই তাহলে সেই সংগঠন বা বাহিনীকে জনগনের বন্ধু সংগঠন বলা যায় কি? এবং এমন কর্মকান্ড সমর্থনকারী সরকার বা রাষ্ট্রকে মানবিক ও আধুনিক গণতান্ত্রীক রাষ্ট্র বলা যায় কি? ধরে নিতে হবে দেশ আসলে গণতন্ত্রের ছদ্দবেশে মূলত সেই সম্রাট আকবরে পাইক পেয়াদার একনায়কতান্ত্রিক শাসনের দিকে ধাবিত হয়েছে।

একটি বেসরকাারী সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ের ক্ষমতাশীন সরকার এ পর্যন্ত র‌্যাবকে দিয়ে প্রায় ২০০০ মানুষকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করিয়েছে। রাষ্ট্র ও র‌্যাব এর কাছে এই দুই হাজার মানুষের পরিচয় সন্ত্র্রাসী হিসেবে। যদি সন্ত্রাসী হয়েও থাকে তবুও প্রাথমিক দৃষ্টিকোন থেকে একটি আদর্শ রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিলো এই মানুষগুলোকে আইনের আওতায় এনে দেশের প্রচলিত  আইন অনুযায়ী শাস্তি ও সংশোধনের ব্যবস্থা করা। একজন মানুষের সম্পর্কে আইন শৃংখলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ থাকলেই একজন মানুষ সন্ত্রাসী বা অপরাধী হয়না, অভিযোগকারী ব্যক্তিকে প্রামানিক তথ্য উপাত্ত ও বিচার বিশ্লেষনের উপর ভিত্তি করে একমাত্র আদালত সন্ত্রাসী বা অপরাধী সাবস্থ্য করতে পারে আবার নিরাপরাধও প্রমান হতে পারে।

যে মানুষগুলোকে হত্যা করা হয়েছে এই মানুষগুলোর আত্নকথন দেশের মানুষ জানেনা। সরকার কেন তাদের বক্তব্য শোনেনি ?কেন সরাসরি হত্যা করলো ? বিচার প্রক্রিয়া ছাড়াই কেন সন্ত্রসী হিসেবে চিহ্নিত করলো ? এই হত্যা প্রক্রিয়া কি সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণের স্বার্থে ?নাকি বিশেষ কোন গোষ্ঠীর স্বার্থে ?যদি কল্যাণের স্বার্থেই হয়, তাহলে দুই হাজার বড় বড় সন্ত্রাসী হত্যা করার পরও দেশ কেন আজ হত্যা, গুম, খুন ও অপকর্মের চারণভূমি ? এই প্রক্রিয়ার নেপথ্যে আসলে কি ঘটছে তা আজ দেশের বিবেকবান ও সমাজ সচেতন মানুষদেরকে ভাবিয়ে তুলছে।

যে মানুষগুলো হত্যা করা হয়েছে তারা প্রত্যেই রাষ্ট্র অনুমোদিত গল্প অনুযায়ী র‌্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধ করতে গিয়ে ক্রসফায়ারে মারা গিয়েছে। কিন্তু এই সাজানো যুদ্ধের আসল ঘটনা একমাত্র অপারেশনাল ফোর্স ও ভিকটিম ব্যক্তি ছাড়া কেউ জানতে পারেনা ।ভিকটিম ব্যক্তিকে যেহেতু পরপারে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাই আসল ঘটনা আর জনসম্মুখে আসার সুযোগ থাকেনা। পরবর্তিতে র‌্যাবের মিডিয়া উইং কর্তৃক ঘটনার সাথে রং রস লাগিয়ে মিডিয়ার সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা হয়। আমাদের মিডিয়াগুলোও উপস্থাপিত গল্পকে অত্যন্ত গুরত্ব সহকারে অনুসন্ধান ছাড়াই খুন হওয়া ব্যক্তিককে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে প্রচার করে থাকে,আর যেসব সাহসী সংবাদ সংস্থা ও সাংবাদিক ঘটনার নেপথ্যে অনুসন্ধানের চেষ্টা চালিয়েছে তাদেরকে অনেক সময় সরকারের এই পাইক পেয়াদা বাহিনী দ্বারা হয়রানীর স্বীকার হতে হয়েছে।

এই বাহিনীর কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে দেশের অভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো সোচ্চার প্রতিবাদ করে আসলেও কোন সরকারই তা কর্ণপাত না করে রাষ্ট্রীয় এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালু রেখেছে। আবার দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতা বাইরে থেকে র‌্যাবের বিরুদ্ধে কথা বললেও ক্ষমতা গিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থেই এই বাহিনীকে ব্যবহার করছে।

আজ যে মানুষগুলোকে রাষ্ট্রীয় ভাবে হত্যা করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকের জীবনের উপর একটু গবেষনা চালিয়ে যদি জানার চেষ্টা করা হয় ঘটনার নেপথ্যের গল্প, তাহলে একটু গভিরে যাওয়ার চেষ্টা করলে দেখা যাবে , এই মানষগুলোর জীবন যাপন স্বাভাবিক ছিলো, কিন্তু জীবনের কোন এক পর্যায়ে অপ্রাপ্তি ,হতাশা ও ব্যর্থতা থেকে জীবনের প্রয়োজনে কোন সমাজ বিরোধী চক্রের প্ররোচনায় অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছে, আবার অনেকেই কোন রাজনৈতিক মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে রাজনীতি করতে এসে রাজনৈতিক নেতাদের ব্যবহারের হাতিয়ার হয়ে পরে নামের সাথে লেগেছে সন্ত্রাসীর তকমা।

আমাদের দেশে বর্তমান যে ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু রয়েছে এই ধারায় মাঠ পর্যায়ে সশস্ত্র ক্যাডার,সুদক্ষ খুনি,চাঁদাবাজ,ত্রাস সৃষ্টিকারী বোমাবাজ,দখলদারিত্বে পারদর্শী নেতাকর্মী ছাড়া প্রতিযোগিতামূলক রাজনৈতিক রেসের ময়দানে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই রাজনীতির প্রয়োজন থেকে এবং ক্ষমতা লুটের লড়াইয়ে শক্তি বৃদ্ধির জন্য আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো সমাজ থেকে কিছু মানুষকে প্রয়োজনের তাগিদেই লাঠিয়াল হিসেবে তৈরী করে এবং উদ্বুদ্ধ করে। এই ছোট্ট লাঠিয়ালই লাঠিবারি খেলতে খেলতে কোন একসময় হয়ে যায় লাঠিয়াল সরদার। সরদার থেকে যখন অর্থ বিত্তের পাশাপাশী তৈরী করে ফেলে আন্ডার ওয়াল্ডে বিশেষ প্রভাব ঠিক তখনি এই মানুষগুলোকে সমাজের কাছে ভয়ংকর সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে এবং ত্রাস সৃষ্টি করে এদেরকে দিয়ে আড়ালে বসে স্যুট কোট ও পাজামা পানজাবী পরিহিত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাধারী স্বচ্ছ ইমেজের সমাজ বিরোধী স্বার্থান্বেষী মানুষেরা চালায় যাবতীয় অপকর্ম ও তৎপরতা। এই আন্ডার ওয়াল্ডের মানুষগুলো যখন আমাদের স্বচ্ছ ইমেজের ভন্ড নেতাদের মুখোস উন্মোচনের কারণ হয়ে দাড়ায়, ঠিক তখনি জনগনের অর্থে কেনা গোলা বারুদ ও বেতন ভাতায় পোষ্য সরকারী পাইক পেয়াদা দিয়ে সুস্থ মাথায় হত্যা করিয়ে জনসাধারণকে বোঝানো হয় তারা দেশের আইন শৃংখলা ও জান মাল রক্ষায় আপোসহীন ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এভাবেই আমাদের শোষক শ্রেণী যেমন নিজ স্বার্থে সমাজ থেকে সন্ত্রাসী সৃষ্টি করছে অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকেও নিজেদের ক্ষমতার প্রভাব প্রতিপত্তি আরো সুদৃঢ়  করার জন্য অপব্যবহার করছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের মাথার ওপর যে শোষক শ্রেনী পাথরের মত চেপে বসেছে এবং তাদের রক্তচোষা নেতৃত্বের কারণে আজ জনগনের টাকায় পোষ্য আইন শৃংখলা বাহিনীগুলো জনসাধারণের সেবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ না হয়ে প্রতিনিয়ত জল্লাদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ঘাতকতা করে চলছে। হত্যা প্রক্রিয়াই যদি সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতার সমাধান হতো তাহলে যে দুই হাজার মানুষকে সন্ত্রাসী হিসেবে হত্যা করা হলো এই হত্যাকাণ্ডের মধ্যদিয়েই বাংলাদেশ শান্তির স্বর্গভূমি হওয়ার কথা ছিলো। মূলত এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপকর্মের মূল শিকড়ে পানি ঢেলে সতেজ করে শুধু ডালপালা ছেঁটে দিয়ে সন্ত্রাসকে আরো শৈল্পীক ভাবে পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করে সমাজ ও রাষ্ট্রকে গ্রাসীত করা হয়েছে।
রাষ্ট্র যদি আজ কল্যাণমুখী হতো তাহলে একজন মানুষের সন্ত্রাসী হয়ে ওঠার কারণ খুজে বের করে তা সমাধানের নানা পদক্ষেপ গ্রহন করতো এবং আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে মৃত্যু হওয়া প্রত্যেকটি ঘটনার প্রকৃত রহস্য খুজে বের করতো এবং যথাযত পদক্ষেপ গ্রহন করে এই অনৈতিক হত্যালীলা বন্ধ করতো।

আসলে যে রাষ্ট্র বা সরকার ব্যবস্থা মানুষকে তার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার যোগ্যতা রাখেনা, সেই রাষ্ট্রের মানুষ হত্যার অধিকার কতটা যৌক্তিক ?

আজ র‌্যাব শব্দটি মানুষের কাছে এক শঙ্কার নাম। কোন পরিবারের কোন সদস্য যদি এই বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়, তাহলে সেই পরিবারের সকল সদস্যদের আতংক ও সংশয়ের মধ্যে প্রতি মুহূর্ত চিন্তা করতে হয় যে, মানুষটি সুস্থ শরীরে আবার ফিরে আসবে কি ?নাকি প্রিয় মানুষটির লাশ রূপে দেখা মিলবে খালে বিলে অথবা কোন মর্গে। এমন শত শত পরিবার  প্রিয়জনের দুঃসহ স্মৃতি বুকে নিয়ে আজ দিনাতিপাত করছে।আজকের সরকার এই বাহিনীকে দিয়ে অনেকেরই পুঙ্গত্বের জীবন উপহার দিয়ে জীবনের বেঁচে থাকার সোনালী স্বপ্নকে ধূসর করে দিয়েছে।র‌্যাবের আক্রশের স্বীকার পঙ্গু লিমন চাইলেই আর কোন দিনও দুই পায়ে খেলার মাঠে দৌড়াতে পারবেনা,পারবেনা দরিদ্র পিতামাতার সংসারের হাল শক্ত ভাবে  ধরতে,সারা জীবন খোড়া হয়েই জীবন অতিবাহিত করে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে।

এক সময় সমাজের কালো টাকার মালিকেরা শত্রু বা প্রতিপক্ষকে খুন করার জন্য পেশাদার খুনি চক্রের সাথে টাকা বিনিময়ে চুক্তি করতো,কিন্তু আজ সময়ের বিবর্তনে র‌্যাব সেই কালো টাকার মালিকদের কাছে আশির্বাদ হয়ে আবর্ভাব হয়েছে ,কারণ এখন খুন করার জন্য টাকার বিনিময়ে র‌্যাব এর সাথে চুক্তি করলেই, খুবই নিখুতভাবে ঝুকিমুক্ত খুনের সেবা প্রদান করে র‌্যাব সমাজ বিরোধী চক্রের সাথে হাত মিলিয়ে কাজ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে নারায়নগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনাই যেন তার উজ্জল দৃষ্টান্ত। আবার অনেকের জমিজমা দখলের ব্যাপারেও মাস্তানদের পরিবর্তে এই বাহিনীর সদস্যদের সাথে চুক্তির করছে, সেই দৃষ্টান্তও আজ দৃশ্যমান ।

...... আপনারদের বিবেকের কাছে একটা প্রশ্ন রাখতে চাই, রাষ্ট্রের বড় চেয়ারে বসে ও মর্যদার পোষাক পরে আজ আপনারা যারা যে টাকার বিনিময়ে ঘৃন্য কাজে লিপ্ত হয়ে রাষ্ট্র ও জাতিকে নিয়ে যে ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছেন, সেই টাকায়  গুলশান বনানীতে কেনা ফ্লাটের দক্ষিনা জানালার বাতাস কি আপনার শরীরকে শীতল করবে? যে নরম বিছানায় স্ত্রীর সাথে আরাম করে ঘুমানোর জন্য মানুষ হত্যা করলেন, আপনার কি সত্যির আয়েশের ঘুম হবে? মনে হবেনা,  আপনি আসলে নরম বিছানায় নয়, বরং লাশের ওপর শুয়ে আছেন?একবারও কি মনে প্রশ্ন জাগেনা, আপনার অভিশপ্ত টাকার ফ্লাটে পরিবারের সবার আয়েশের ঘুম হলেও অপঘাতে আপনার হাতে খুন হওয়া মানুষগুলো আত্না আপনার চিন্তার জগতে আনাগোনা করে আমৃত্যু  দংশন করবে। একটু অন্যভাবে চিন্তা করে দেখুন ,আপনার যে প্রজন্মকে উচ্চবিলাশী জীবন উপহার দেওয়ার জন্য আজ আপনার অর্জিত শিক্ষা, জ্ঞান ও বিবেককে বলিদান করলেন,সেই প্রজন্মকে মূলত কি দিয়ে গেলেন? আপনি আসলে আপনার প্রজন্মজকে এক ঘৃনার ইতিহাস মানুষের রক্ত দিয়ে রচনা করে দিয়ে গেলেন।
যদিও জংধরা তালাবদ্ধ বিবেকেরবানদের কাছে বিবেক ও নৈতিকতার গল্প হাস্যকর।

আজ শুধু র‌্যাবের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে শোচ্চার হলেই সমস্যার সমাধান মিলবেনা মূলত সন্ত্রাস ও অপকর্মের যে ফলবান বৃক্ষ আমাদের মাথার উপর ছেয়ে আছে সেই ফলবান বিষবৃক্ষের মূলশিকড় উপরে ফেলার দিকে লক্ষ্য স্থির করে, সাধারণ মানুষের মধ্যে গনসচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য প্রত্যেক সমাজ সচেতন ও যারা শোষক শ্রেণীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে দৃঢ়  সংকল্পবদ্ধ তাদের প্রত্যেককেই আজ যার যার অবস্থান থেকে দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে কথা বলা শুরু করতে হবে। যেদিন সামাজিক জাগরণের মধ্যেদিয়ে এক মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে সংঘবদ্ধ গণশত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই চূড়ান্ত করতে পারবো সেই দিনই জাতীর মুক্তি। তানাহলে সমাজ আজ যে ধারায় বহমান সেই ধারা অব্যহত থাকলে সমাজের প্রত্যেকটি মানুষকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কোন একসময় লিমন কিংবা দু হাজার অপমৃত্যুর স্বীকারদের মত ভাগ্য বরণ করা লাগতে পারে।

রবিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৪

প্যারিসে খুঁজে ফেরা বাংলাদেশ

প্যারিসে এসেছি প্রায় তিন বছর আগে। আসার পর আড়াই বছর ছিলাম বাঙালি পরিমণ্ডলে। এখন ছিতে নটর ডেম-নিয়ন্ত্রিত একটি হোস্টেলে উঠেছি। বাঙালি পরিমণ্ডলে থাকার সময় কখনো বুঝতে পারিনি, আমি প্রবাসে আছি। বাংলাদেশি খাবার, বাংলা ভাষা, বাঙালির মমতা আমাকে ভুলিয়ে রেখেছিল প্রবাসের কষ্ট।
নতুন জায়গায় আমরা পাঁচজন মাত্র বাঙালি। বাকি সবাই ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের। আমার রুমমেট একজন আফ্রিকান। নাম ছেরগি। সাবেক ফ্রেঞ্চ কলোনির মানুষ হওয়ায় সুযোগ পেলেই মন খুলে ফ্রেঞ্চ ভাষায় অনর্গল কথা বলতে থাকে। ছেরগির কথা না বুঝলেও বোঝার ভান করে রুমে ওর সঙ্গে তাল মেলাতে হয়।
হোস্টেলের নিচতলার ক্যানটিন। খাওয়ার সময় আমরা বাঙালিরা এক টেবিলে বসার চেষ্টা করি। তখন আমাদের মধ্যে নিজ ভাষায় আলাপ হয়। খেতে খেতে আড্ডা দিই। আমাদের আড্ডায় যোগ দেয় একজন পাকিস্তানি। কিন্তু সে বাংলা বোঝে না। আড্ডায় নীরব থাকে। গায়ের রঙের কারণেই সে আমাদের টেবিলে বসে। তার সুবিধার্থে মাঝেমধ্যে আমরা ইংরেজি বলি।
ভাত-মাছে অভ্যস্ত আমাদের প্রথম প্রথম ফরাসি খাবারে সমস্যা হলেও কিছুদিনের মধ্যেই আমরা মানিয়ে নিয়েছি। এখানে আমাদের অবসর সময়ের অনেকটাই কাটে বই পড়ে। মাঝেমধ্যে রাতের খাবার খেয়ে যাই প্যারিসের বুক চিরে বয়ে চলা সেন নদীর তীরে।

নদীর ওপর শিল্পের ছোঁয়া লাগানো কারুকার্যময় প্রশস্ত সেতু। এই সেতুর ওপর দাঁড়ালে অন্য রকম এক মুগ্ধতায় দেহ-মন ভরে যায়। সেতুর ওপর নীরবে দাঁড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোস্টগুলোর আলোর দ্যুতি এবং মাঝেমধ্যে জোনাকির মতো মিটিমিটি আলো ছড়িয়ে প্রমোদতরির ভেসে চলার দৃশ্য এক ভিন্ন রকম অনুভূতির সৃষ্টি করে। রাতের প্যারিসের এই সৌন্দর্যে আমি মুগ্ধ। রাতের এই সৌন্দর্যে মুগ্ধ হননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই দায়!
আমি যে এলাকার কথা বর্ণনা করছি, সে এলাকার নাম আনভালিদ।
এর পাশেই ভাস্কর্যসংবলিত চার স্তম্ভবিশিষ্ট দণ্ডায়মান সেতুটিকে মনে হয়, কাউকে অভ্যর্থনা জানাতে অপেক্ষা করছে। সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে চোখের দৃষ্টির দিক পরিবর্তন করলে দৃষ্টিতে ধরা দেবে সোনালি আলোয় উদ্ভাসিত প্যারিসের সব স্থাপনার উচ্চতা ভেদ করে শত বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা আইফেল টাওয়ার। সবুজ দূর্বা ঘাসে ঢাকা বিরাট মাঠ পেরিয়ে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের সমাধি (আর্মি মিউজিয়াম) ও ফ্রান্সের ঐতিহাসিক পার্লামেন্ট ভবন।

আশপাশে একটু হাঁটলেই চোখে পড়ে
ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট দ্য গ্যলের ভাস্কর্য,
ঐতিহাসিক প্যালেস দ্য কনকর্ড, প্যারিসের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাভিনিউ দ্য সনজোলজি ছাড়াও অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থাপনা। মুগ্ধ হতে হয় বৃক্ষশোভিত নীরব ও মৃদু কোলাহলপূর্ণ প্রকৃতির আপন আতিথেয়তায়।
মাঝেমধ্যে আমি ছবি তোলার নেশায় ক্যামেরা হাতে সৌন্দর্য শিকারে ঘুরি-ফিরি বর্ণনাস্থলে। ক্যামেরায় প্যারিসের মনোলোভা সৌন্দর্যের ছবি তোলার সময় স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। চোখে ভেসে ওঠে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনের রাতের মায়াভরা রূপ ও চন্দ্রিমা উদ্যানের পড়ন্ত বিকেলের সৌন্দর্য। খুঁজে ফিরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার প্রিয় রাতের ফুলার রোডের সুখস্মৃতিমাখা দিনগুলো। যে সৌন্দর্যগুলো কখনোই ক্যামেরাবন্দী করা হয়নি আমার।
প্রবাসের চাকচিক্য রূপ-প্রকতির মধ্যেও বুকের এক কোণে আমার প্রিয় মাতৃভূমির একখণ্ড ছবি প্রতিনিয়ত বয়ে নিয়েই কাটে আমার প্রাত্যহিক দিনপঞ্জি। প্রতীক্ষার প্রহর গুনি, কবে ফিরে যাব আমার মাতৃভূমির বুকে। আবার নয়ন জুড়াব দেশমাতার রূপলাবণ্যে।


ফ্রান্সের বাংলা কমিউনিটির কিছু অসঙ্গতি এবং সাম্প্রতিক প্রেসক্লাব বিতর্ক।

প্রায় চল্লিশ হাজার জনগোষ্ঠীর আমাদের ফ্রান্সের বাংলাদেশী কমিউনিটি।প্রত্যেকেই কোননা কোন কারণে প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে এই বিদেশ বিভুঁইয়ে বসতি স্থাপন করেছি। আমরা যারা এই ভূখন্ডে বসবাস করছি তারা প্রত্যেকেই কোননা কোন ভাবে গুণান্বিত। কারো মধ্যে রয়েছে শিল্প সত্তা, কারো মধ্যে কঠোর পরিশ্রম ও জীবনের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকার অদম্য মনোবল এবং সৃজনশীল মেধা ও মনন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে , আমাদের সহজাত গুন ও চিন্তাকে বিকশিত করার জন্য স্ব স্ব কর্মব্যস্ততার পাশাপাশী এখানে গড়ে তুলেছি নানাবিধ সাংস্কৃতিক,সামাজিক,রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন। দিন দিন কমিউনিটির সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের অটুট বন্ধন এবং উন্নত চিন্তা সমৃদ্ধ জনগোষ্ঠী তৈরির ক্ষেত্রে নতুন করে ভাবনার সময়ও এসেছে।

আমার এখন পর্যন্ত এখানকার কোন সাংগঠনিক কর্মকান্ডে যুক্ত হবার সুযোগ হয়নি, কিন্তু চল্লিশ হাজার সদস্যের বাঙ্গালী পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে কিছু কথা বলার প্রয়োজন অনুভব করছি। এখানে কমিউনিটির বিভিন্ন ফেজবুক পেজের সাথে সংযোগ থাকার কারণে কমিউনিটির নানাবিধ খবর ফেজবুক ওয়ালে দেখতে পাই। কোন কোন খবর নিজেকে পুলকিত করে আবার কোন খবর সত্যি হতাশ করে। সম্প্রতি একটি কমিউনিটি পেজে ‘শতর্ক হউন’ ফ্রান্সে জামাতি প্রেসক্লাব শিরোনামের একটি লেখা কমিউনিটি সংক্রান্ত অনেক কথা মনের মধ্যে উস্কে দিলো। লেখাটিতে নির্দিষ্ট কয়েক জন ব্যক্তির এখানে আগমন,অবস্থান,বর্তমান সামাজিক অবস্থান,জ্ঞান গরিমা ইত্যাদি হেয় ভাবে বর্ণনা করে লেখক নিজের শ্রেষ্টত্বের প্রমান দেবার চেষ্টা করেছন ।আমরা যারা এখানে বসবাস করছি তারা সবাই জানি যে, কিছু ব্যক্তিবর্গ শিক্ষা বৃত্তি ,পড়াশুনা ও পেশাগতভাবে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ ছাড়া অন্য বৃহৎ অংশ কিভাবে বসবাসের স্থায়িত্ব লাভ করেছে। কোন যোগ্যতার বিশেষ মানদন্ডে আমরা এই স্থায়িত্ব লাভ করিনি, যেটা নিয়ে গর্ব করা যায়।ক্ষুদ্র স্বার্থে একজন বাঙ্গালী হয়ে এই দূরপ্রবাসে বসে অন্য বাঙ্গালীকে অসম্মান করার মধ্যে কোন গৌরব বা মহত্ব নিহিত থাকতে পারে কি? একজন বাঙ্গালী ভায়ের কাগজ হয়নি বলে এভাবে উলঙ্গ করার অধিকার কি আপনার আছে ? বরং আপনার কাগজ আছে বলে, কাগজ ছাড়া ভাইটির পাশে দাড়িয়ে,মানসিক ভাবে মনোবল জুগিয়ে তার কাগজ হওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করাই একজন গর্বিত বাঙ্গালীর  দায়িত্ব নয় কি ? শুধু এই বিষয়টিই নয় পূর্বেও এ ধরণের  আরো অনেক বিষয় দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমরা কেউই ভুলের ঊর্ধে নই। অনেক সময় জেনে,না জেনে আমরা ভুল করে থাকি।ধরুন আমি আপনার ভাই হয়ে একটা ভুল করেছি, তাই বলে আপনার একটা ফেজবুক এ্যাকান্ট বা নিউজ পোর্টাল আছে  বলেই আমাকে শুধরে না দিয়ে এবং সংশোধনের সুযোগ না দিয়ে এভাবে ন্যাংটা করে কমিউনিটির কাছে উপস্থাপন করবেন। বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন, এটা কতটুকু ন্যায় সঙ্গত। কেউ যদি ভুল করে তা কমিউনিটির শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করাই সমীচীন নয় কি ? একবার ভাবুন, কাউকে নিয়ে নেতিবাচক কিছু লিখে ফেজবুকে পোষ্ট করে ছড়িয়ে দিলেন তা শুধু ফ্রান্সের কমিনিটির মানুষই দেখছেনা, মুহূর্তের মধ্যেই খবরটি পৌঁছে যাচ্ছে বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে বসবাসরত বাঙ্গালীদের কাছে যা সত্যতা যাচাই ছাড়াই সবার মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তি সহ সমম্ত কমিউনিটি সম্পর্কে এক বিভ্রান্তিকর ধারণার জন্ম নিচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে যে বিষয়টি ফেজবুকে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে,তাহলো প্যারিসে একটি বাংলা প্রেসক্লাব গঠনকে কেন্দ্র করে। প্যারিসে গণমাধ্যম কর্মীদের একটি সংগঠন হবে এটি সত্যিই আনন্দের ব্যাপার। কিন্তু এই ব্যাপারটিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত ঘটনাগুলো অনেককেই মর্মাহত করেছে। আমার জানা মতে বাংলাদেশের অধিকাংশ গণমাধ্যমগুলো তাদের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়োগকৃত প্রতিনিধিদের  কোন প্রকার ভাতা বা আর্থিক সুবিধা প্রদান করেনা। আর যারা করে তার পরিমান নিতান্তই নগন্য। সেই সূত্রে ফ্রান্সে বাংলাদেশী গণমাধ্যমের যেসব সংবাদকর্মী ভাইয়েরা কাজ করছেন তারা কোন প্রকার আর্থিক সুবিধা ছাড়াই ,নিজ খরচে ক্যামেরা কিনে স্বেচ্ছায় সামাজিক  দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে কমিনিটিকে সেবা দিয়ে চলছেন। এ জন্য আপনাদের সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত মূল্যায়ন হচ্ছে, আপনারা কমিউনিটির মহৎ,সচেতন ও সেরা মানুষদের অন্তর্ভুক্ত। কারণ নিজস্ব কর্মব্যস্ততার পাশাপাশী  আপনারা এখানকার  বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের নিয়ে ভাবেন এবং তাদের সুখ দুঃখ,আনন্দ বেদনা,আচার অনুষ্ঠান মিডিয়ার মাধ্যমে ষোল কোটি বাঙ্গালীর কাছে তুলে ধরেন। বিনিময়ে কমিউনিটির মানুষ আপনাদেরকে সমীহ করে,সম্মান করে,শ্রদ্ধা করে। তাই আমি বলবো, আপনারা শুধু একটি প্রেস ক্লাব নয়,একটি মহতি সংঘ গঠনের উদ্যেগ নিয়েছিলেন।যেহেতু সমাজের মহৎ ও সচেতনদের সংগঠন তাই প্রাথমিক পর্যায়ে দ্বন্দের ঊর্ধে থাকাই বাঞ্চনীয় ছিলো। দেখতে পেলাম একটি কমিটি না হয়ে দুইটি কমিটি আত্নপ্রকাশ করেছে। কারণ নেতৃত্বের ভাগাভাগিতে সমঝোতায় না পৌঁছানো। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক পক্ষ অপর পক্ষকে ফেজবুকের পাতায় উলঙ্গ করার যে মহড়া দিচ্ছে তা খুবই হতাশা ব্যঞ্জক। আপনারা কমিউনিটির সেরা অংশ হয়ে যদি একে অপরকে ছোট করে উপস্থাপন করেন,অসম্মান করেন, তাহলে অন্যরা কি করবে ? সুষ্ঠ, সঠিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হলে একদিন সবাই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাদ নিতে পারবেন। কেউ একটু আগে পরে হলে কি এমন ক্ষতিইবা হবে। এমন একটি ব্যাপার নিয়ে নিজেদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ একেবারেই অগ্রনযোগ্য।
যে দিন দেখবো বাংলাদেশী যুবকেরা ক্যামেরা হাতে ফরাসি সংবাদের পিছে ছুটছে,ফরাসি মিডিয়ায় পেশাদারী ভাবে কাজ করছে এবং তাদের স্বার্থ রক্ষায় বাংলা ভাষাভাষী সাংবাদিকদের একটি সংগঠন বা প্রেসক্লাব নির্মিত হয়েছে, সেই দিন মনে হবে ফরাসী বাংলা কমিউনিটির কিছু অর্জন হয়েছে। আজ কমিউনিটি প্রেসক্লাব গঠনের যে ক্ষুদ্র প্রয়াস চলছে আশা করি এখান থেকেই আপনারা সমস্ত দ্বন্দের ঊর্ধে গিয়ে এবং একত্রিত হয়ে সেই কাঙ্খিত লক্ষ্যে বাংলা কমিউনিটির মানুষদের এগিয়ে নিতে কাঁধে কাঁধ রেখে কাজ করে যাবেন।
পরিশেষে বলতে চাই,আমরা বাংলাদেশ থেকে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর চক্রান্তের যে বিভাজন প্রক্রিয়ার মন্ত্র মস্তিস্কে  ধারণ করে এখানে এসেছি তা ঝেড়ে ফেলে, এই ভূখন্ডের জাতিগোষ্ঠীর (ফরাসি) জাতীয়তাবোধ,রাষ্ট্রের প্রতি মমত্ব ও ঐক্য থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের প্রিয় স্বাধীন সার্বভৌম মাতৃভূমিটাকে ভালোবাসি এবং প্রবাস থেকে  দেশপ্রেম ও ঐক্যের মডেল হয়ে দেশের মানুষের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করি। আমরা শোষকের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মু্ক্ত হয়ে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব পেলেও এখনো অর্থনীতির পরাধীনতার জালে আবদ্ধ তাই আমাদের একমাত্র অর্থনৈতিক মুক্তির যে যুদ্ধ চলছে ,সেই যুদ্ধে প্রত্যেক প্রবাসী যার যার নিজস্ব অবস্থান থেকে অবদান রাখবো, এটাই প্রত্যাশা।