শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৩

ফ্রান্সের প্রকৃতিতে শীতের আগমনী সুর


গ্রীষ্মের তাপদাহ ও শরতের শুভ্রতাকে বিদায় দিয়ে ফ্রান্সের প্রকৃতিতে এসেছে শীত। বৃক্ষরাজির বেশিরভাগ বৃক্ষের পাতা ঝরে পড়েছে। পাতাহীন কান্ডবিশিষ্ট গাছের অসাধারণ শৈল্পিক রূপের পাশাপাশি অনেক বৃক্ষ যৌবনের সবুজ রঙ বদলে ধারণ করেছে হলুদ বর্ণের পত্রযুক্ত রূপ। সৌন্দর্যবর্ধক লতাবিশিষ্ট গুল্ম, ক্যাকটাস ও পুষ্প ফোটানো গাছগাছালি বসন্ত ও শরতের প্রকৃতিকে সুষমায়িত ও ফুল ফোটানোর মহান দায়িত্ব পালন করে ক্লান্ত দেহকে অবসর দিয়েছে। এখন অপেক্ষা শুধু তুষারের আবরণে শেষ সমাধির।
 শীতের জড়োসড়ো প্রকৃতিতে পাখপাখালির কলকাকলি প্রায় থেমে এসেছে। বাহারি রঙ ও ডিজাইনের টি শার্ট, জিন্স ও শর্ট পোশাকের পরিবর্তে সবার শরীরে উঞ্চতাবর্ধক শীতের পোশাক। মেঘযুক্ত আকাশ, ঝিরিঝিরি বৃষ্টিধারা এখন জীবনধারার প্রাত্যাহিক অংশ। সূর্য মাঝে মাঝে মেঘ ভেদ করে তার অস্তিত্বকে জানান দিয়ে লুকোচুরি খেলায় মগ্ন। এমন প্রকৃতিতে একচিলতে রোদ যেন সদ্য যৌবনা ষোড়শী কন্যার মুখ দর্শন। পর্যটকের দল প্যারিসের যে সব পথঘাট, রেস্তোরাঁ কোলাহলমুখর করে রেখেছিল তা নিঝুম নিস্তব্ধতায় রূপান্তর করে সবাই আপন নিড়ে ফিরে গেছে।

গোটা ইউরোপ জুড়ে এখন থেকেই প্রস্তুতি চলছে খ্রীষ্টধর্মীয় সবচেয়ে বড় উৎসব ক্রিসমাস ডে পালনের। ফ্রান্সও তার ব্যতিক্রম নয়। এখানে এই উৎসবকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় নোয়েল। শীতের সমস্ত রিক্ততা ও সিক্ততাকে আনন্দে রূপান্তরের ক্ষেত্রে নোয়েল তুলনাহীন। দিনটি একটি বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীর উৎসব হলেও এখানে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাই এই উৎসবের আনন্দে নিজেকে রাঙ্গাতে কার্পণ্যতা করে না। এখন থেকেই সুপার মার্কেট ও বিশেষায়িত দোকানগুলো নয়েল টুপি, চকলেট, কেক ও নানাবিধ উপহার সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছে। অনেক উৎপাদক প্রতিষ্ঠান তাদের নিজ পণ্য সামগ্রীর ওপর বিশেষ ছাড় দিয়েছে। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই ফ্রান্সের সকল শহরগুলো জেগে উঠবে চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জায়। ফুলের দোকানগুলোতে লেগে যাবে ক্রিসমাসট্রি বিক্রির ধুম।
প্রত্যেক ফরাসি উপহার বিনিময় করবে প্রিয় মানুষ, বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনের মধ্যে। শীতের তীব্রতা অনেকটাই ম্লান হয়ে যাবে এই উৎসব আনন্দের কাছে। তুষারের সাদায় রূপ নেবে এক ভিন্ন প্রকৃতি।


শীতের এই তীব্রতায় থেমে থাকে না ফরাসি জীবন ও জীবিকা। ভোরের আলো ফোটার আগেই কর্মব্যস্ত মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মেট্রো-ট্রাম-বাসস্টেশন এবং রাস্তাঘাট ও শপিংমল। চারদিকে থাকে স্বাভাবিক জীবনধারা। মানুষ প্রতীক্ষায় থাকে। শীতের জীর্ণ প্রকৃতিকে বিদায় দিয়ে জীবনধারায় লাগুক আবার বসন্ত বাতাস।


ফ্রান্সের প্রকৃতিতে শীতের আগমনি, প্রকাশ :দৈনিক প্রথম আলো ৩০.১১.২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন